তাসকিন: লিটন ধারাবাহিক হলে বড় ইভেন্টে ভালো করবে বাংলাদেশ

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আরও একবার নিজের জাত চেনালেন পেসার তাসকিন আহমেদ, জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। একই ম্যাচে ছন্দে ফিরেছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস, অসাধারণ এক ফিফটি তুলে নিয়েছেন তিনি। এই দুই ক্রিকেটারের নৈপুণ্যে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সহজ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

চলমান এশিয়া কাপের আগে এমন পারফরম্যান্স দলের জন্য বড় স্বস্তির। সম্প্রতি পাকিস্তান সিরিজে ব্যাট হাতে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন লিটন। সেই সিরিজে তার রান ছিল ১, ৮ ও ৮। তবে সিলেটে ডাচদের বিপক্ষে ১৩তম আন্তর্জাতিক ফিফটি করে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করেছেন তিনি।

লিটনের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দলের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তাসকিন। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘লিটন অসাধারণ ব্যাটিং করেছে মাশাআল্লাহ। আসলে লিটনের ভালো খেলাটা বা ফর্মে থাকাটা আমাদের টিমের জন্য অনেক জরুরি। মাশাআল্লাহ ও সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মে আসছে এবং ভালো ব্যাটিং করছে, নেটেও দেখছি। এই ধারাবাহিকতা যদি আমাদের আগাতে থাকে, সামনে বড় ইভেন্টেও ভালো করা সম্ভব।’

দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরেছেন অলরাউন্ডার সাইফ হাসান। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। প্রথমে বোলিংয়ে এসে দুই ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচ করে তুলে নেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এরপর ব্যাট হাতে ১৯ বলে অপরাজিত ৩৬ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।

টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস সাইফকে দলে একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই চেয়েছিলেন। সাইফের এমন পারফরম্যান্সে খুশি তাসকিনও। তিনি বলেন, ‘মাশাআল্লাহ, সাইফের ভালো অবদান ছিল। বোলিংয়ে দুইটা উইকেট নিয়েছে, ব্যাটিংয়েও দারুণ ফিনিশ করছে।’

২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তাসকিন। এবার সিলেটে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও দেখা গেল তার পুরনো ছন্দ। অসাধারণ লাইন-লেংথে বল করে ডাচ ব্যাটসম্যানদের শুরু থেকেই চাপে রেখেছেন তিনি, ছিলেন নিয়ন্ত্রিত ও আগ্রাসী। পরিশ্রমের ফল পেয়ে দারুণ খুশি তাসকিন।

ম্যাচ সেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে তাসকিন বলেন, ‘সব সময়ই দারুণ লাগে এমন ম্যাচ খেলতে, বিশেষ করে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। চোট কাটিয়ে ওঠার পর ছন্দ খুঁজে পেতে কিছুটা ভুগছিলাম, তবে দিন দিন তা ভালো হচ্ছে। গত কয়েক দিন অনুশীলনে অনেক পরিশ্রম করেছি, আর পরিশ্রমের ফল একদিন না একদিন মিলবেই। উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো ছিল, ছিল শিশিরের প্রভাবও। আমি শুধু মৌলিক বিষয়গুলোই মেনে চলেছি এবং সঙ্গে বৈচিত্র্যগুলো কাজে লাগিয়েছি।’

পেসারদের ইনজুরি ও কাজের চাপ সামলাতে টিম ম্যানেজমেন্ট বিশেষ পরিকল্পনা করে থাকে। ওয়ার্কলোড কমানোর জন্য সাধারণত এক-দুই ম্যাচ বিরতি দিয়ে পেসারদের খেলানো হয়। তবে তাসকিন এসব চাপ নিয়ে ভাবেন না। তিনি বলেন, ‘আমি তো সব ম্যাচেই খেলতে চাই। এমনকি প্রস্তুতি ম্যাচেও বাদ যেতে চাই না। কিন্তু আমাদের ম্যানেজমেন্ট রয়েছে, তারা এসব নিয়ে কাজ করেন। আমার কতটুকু খেলা উচিত সেটা তারাই খেয়াল রাখেন। সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করছি।’

নিজের বোলিং কৌশল নিয়ে তাসকিন আরও বলেন, ‘পেস বোলার হিসেবে আমি ফাস্ট বল করতে পছন্দ করি। তবে বিষয়টি হলো পরিস্থিতি বুঝে বল করা। যে পরিস্থিতি যেমন বল করার কথা ছিল, তেমন চেষ্টা করছি। ভালো প্রয়োগ হয়েছে। ভালোর তো শেষ নেই। টি-টোয়েন্টি খেলা, অনেক সময় অনেক ভালো বলে বাউন্ডারি হয়। ভ্যারিয়েশনগুলো সঠিক সময়ে ব্যবহার করতে পারায় হয়তো আজকের এই সাফল্যটা পেয়েছি।’

এশিয়া কাপের আগে লিটনের ফর্মে ফেরা, সাইফের অলরাউন্ড নৈপুণ্য এবং তাসকিনের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ দলের জন্য ইতিবাচক বার্তা। এই জয় আসন্ন বড় টুর্নামেন্টের জন্য দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।