নির্বাচন কমিশন: আসন্ন ভোটে নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারবেন প্রতিবন্ধীরা

আসন্ন নির্বাচনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেন নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও দেশে নিবন্ধিত ৩০ লাখেরও বেশি প্রতিবন্ধী ভোটারের মধ্যে বিগত নির্বাচনে মাত্র ১০ শতাংশ ভোট দিতে পেরেছিলেন। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইসি বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অক্ষম প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সচেষ্ট। ‘ন্যাশনাল কনসালটেশন অন ইনক্লুশান অব পারসনস উইথ ডিজ্যাবিলিটিস ইন ইলেকটোরাল প্রসেস’ শীর্ষক এক পরামর্শমূলক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার (৩১ আগস্ট) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং সাইটসেভার্স ইকুয়াল বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় উঠে এসেছে যে, ৩০ লক্ষাধিক প্রতিবন্ধী ভোটার থাকা সত্ত্বেও গত নির্বাচনগুলোতে তাদের খুব কম সংখ্যকই ভোট দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাকে ইসি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের মূলভিত্তি বলে মনে করে। তাই ইসি বাস্তবসম্মত সমাধানের মাধ্যমে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে প্রতিটি নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে ভোট দিতে পারেন।

পরামর্শ সভায় প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমাধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল প্রতিবন্ধকতামুক্ত ভোটকেন্দ্র তৈরি, প্রতিবন্ধীদের জন্য অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার প্রচলন, প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ, সহজলভ্য তথ্যের ব্যবস্থা এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোর (ওপিডিএস) সক্রিয় অংশগ্রহণ।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, সহজগম্যতা কেবল একটি অধিকার নয়, এটি কার্যকর শাসনেরও অংশ। তারা ভোটকেন্দ্রগুলোকে আরও সহজলভ্য করতে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নির্বিঘ্ন ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার উল্লেখ করেন, যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ভোট দিতে না পারেন, তবে সবার ভোটাধিকার কখনোই কার্যকর হবে না। তিনি জানান, ইউএনডিপি তাদের ‘ব্যালট’ ও ‘ড্রিপ’ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভোটসংক্রান্ত তথ্য সহজ ফরম্যাটে সব নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।

প্রতিবন্ধী-অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মহলও তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের কাউন্সেলর ও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রধান আলবার্তো জিওভানেত্তি এবং সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও জেন্ডার সমতা বিষয়ক পাওলো ক্যাস্ত্রো নেইডারস্ট্যাম এই বিষয়ে তাদের সংহতি প্রকাশ করেন। এই পরামর্শমূলক সভায় নীতিনির্ধারক, নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন, সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন সহযোগীরা একত্রিত হয়ে প্রতিবন্ধী ভোটারদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য বাস্তবসম্মত ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইটসেভার্স-এর ক্যাম্পেইন অ্যাডভাইজার আয়ন দেবনাথ এবং বিস্ক্যান-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব।