আপনি পড়ছেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুদ্ধোত্তর গাজা নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের নগদ অর্থ ও বিভিন্ন সুবিধার বিনিময়ে ‘স্বেচ্ছায়’ অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। রবিবার ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনার আওতায় ডিজিটাল টোকেন, নগদ অর্থ এবং অন্যত্র খাদ্য ও বাসা ভাড়ার বিনিময়ে গাজাবাসীকে তাদের ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

ম্যাপে গাজা উপত্যকার অবস্থান

ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে আসা ৩৮ পৃষ্ঠার ওই প্রস্তাবনা অনুযায়ী, গাজার ২০ লাখেরও বেশি অধিবাসীকে অন্তত সাময়িকভাবে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুনর্গঠন চলাকালে দুটি উপায়ে এটি করা হবে—হয় ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য কোনো দেশে চলে যেতে হবে, অথবা গাজার ভেতরেই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ন্ত্রিত ও সুরক্ষিত অঞ্চলে থাকতে হবে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, ভূসম্পত্তির মালিকদের ‘অন্তত সাময়িক’ স্থানান্তরের জন্য ডিজিটাল টোকেন দেওয়া হবে। এই টোকেন দিয়ে তারা পরবর্তীতে পুনর্গঠনের অধিকার, বিদেশে স্থানান্তরের সুযোগ অথবা গাজায় পরিকল্পিত ছয় থেকে আটটি ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত স্মার্ট সিটিতে’ নির্মিতব্য অ্যাপার্টমেন্ট নিতে পারবেন।

যারা গাজা ছেড়ে যেতে রাজি হবেন, তাদের পাঁচ হাজার ডলার নগদ অর্থ, চার বছরের জন্য বাসা ভাড়া এবং এক বছরের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যারা সুরক্ষিত অঞ্চলে থেকে যাবেন, তাদের অস্থায়ী আবাসন ও জীবনধারণের খরচের তুলনায় যারা চলে যাবেন, তাদের পেছনে ট্রাস্টের প্রায় ২৩ হাজার ডলার সাশ্রয় হবে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘গাজা পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক ত্বরান্বয়ন ও রূপান্তর (গ্রেট) ট্রাস্ট’ নামে পরিচিত এই প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত ‘গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন’-এর সঙ্গে কর্মরত কয়েকজন ইসরায়েলি। এর আর্থিক পরিকল্পনা করেছে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের একটি দল।

এই পরিকল্পনায় অবকাশ যাপন কেন্দ্র ও কৃত্রিম দ্বীপসহ ‘গাজা ট্রাম্প রিভিয়েরা’, আবাসন, বাণিজ্য, শিল্প, বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও সবুজ এলাকাসমৃদ্ধ ছয় থেকে আটটি ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত স্মার্ট সিটি’ এবং জমির টোকেন ফেরত দিয়ে ফিরে আসা পরিবারদের জন্য ৭৫ হাজার ডলার মূল্যের ১,৮০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।

যুদ্ধোত্তর গাজা নিয়ে ট্রাস্টের পরিকল্পনা এবং প্রশাসনের আলোচনার সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই সংবেদনশীল বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ জানিয়েছে, ট্রাস্টের পরিকল্পনাটি তাদের দ্বারা স্পষ্টভাবে অনুমোদিত ছিল না এবং আর্থিক মডেলিংয়ের নেতৃত্ব দেওয়া দুজন জ্যেষ্ঠ অংশীদারকে পরবর্তী সময়ে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, দূত স্টিভ উইটকফ, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং তার জামাতা জ্যারেড কুশনারসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, তবে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি।

এই পরিকল্পনাটিকে লাভজনক হিসেবে দেখানো হয়েছে, যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তহবিলের প্রয়োজন হবে না। এটি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঠিকাদারদের ওপর নির্ভরশীল এবং অনুদানের ওপর ভিত্তি করে চলা ‘গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন’-এর বিপরীত। এই ট্রাস্ট বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কারখানা, তথ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে সমুদ্রতীরবর্তী অবকাশ যাপন কেন্দ্র এবং উঁচু অ্যাপার্টমেন্টের মতো বড় প্রকল্পে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, এক দশকের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ওপর প্রায় চারগুণ মুনাফা হবে, যা ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্ট’ রাজস্ব দ্বারা চালিত হবে। এর কিছু বিবরণ এর আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস প্রকাশ করেছিল।

এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অধীনে গাজার প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব গ্রেট ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করবে’, যা পরে আরব ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের নিয়ে একটি বহুপাক্ষিক সংস্থায় রূপান্তরিত হবে।

এই ট্রাস্ট প্রায় ১০ বছর গাজা শাসন করবে, ‘যতক্ষণ না একটি সংস্কারকৃত ও উগ্রবাদমুক্ত ফিলিস্তিনি শাসনব্যবস্থা এর স্থলাভিষিক্ত হতে প্রস্তুত হয়’। এখানে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কোনো উল্লেখ নেই, শুধু বলা হয়েছে যে ভবিষ্যৎ সত্তাটি ‘আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে’।

রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদিল হক সতর্ক করে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ফিরতে বাধা দেয় বা পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হয় এমন যেকোনো প্রকল্প বেআইনি হবে, ‘তাতে চলে যাওয়ার জন্য যতই নগদ প্রণোদনা দেওয়া হোক না কেন’।

এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প গাজাকে ‘দখল’ ও পুনর্গঠনের প্রস্তাবের পক্ষে কথা বলেন। এর এক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় তিনি প্রথম এই পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ১৯ লাখ মানুষের জন্য সুন্দর আবাসন তৈরি করব... নিরাপদ আবাসন, যা বর্তমান বিপজ্জনক এলাকা থেকে কিছুটা দূরে হবে’।

ফিলিস্তিনিদের তাদের জমিতে ফিরতে দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প উত্তর দেন, ‘না, তারা ফিরবে না, কারণ তারা আরও অনেক ভালো আবাসন পাবে, আরও উন্নত’।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.