ক্লিয়ার প্রোটিন: স্বাস্থ্যকর বিকল্প নাকি নতুন বিপণন কৌশল?

পপকর্ন, কফি থেকে শুরু করে আইসক্রিম পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের খাবারে প্রোটিনের ব্যবহার বাড়ছে। উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত পণ্যের এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার মধ্যেই সম্পূরক খাদ্য বা সাপ্লিমেন্টের বাজারে একটি নতুন রূপের আবির্ভাব ঘটেছে, যা এখন সবার মনোযোগ আকর্ষণ করছে।

গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত মুদিপণ্যের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ক্রেতারা এমন সব পণ্য খুঁজছেন যা পেশি মেরামত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শরীরের বিপাক ক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক। স্বাস্থ্য সচেতনদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রোটিন শেক বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত ‘হোয়ে কনসেন্ট্রেট’ দিয়ে তৈরি চকলেট বা ভ্যানিলার মতো বিভিন্ন স্বাদের এই শেকগুলো পুষ্টি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।

তবে সম্প্রতি সাপ্লিমেন্টের বাজারে সাড়া ফেলেছে ‘ক্লিয়ার প্রোটিন’। এটি মূলত ‘হোয়ে প্রোটিন আইসোলেট’ থেকে তৈরি, যা দেখতে অনেকটা ফলের রসের মতো উজ্জ্বল রঙের পানীয়। দ্য ভিটামিন শপের তথ্য অনুযায়ী, তাদের ওয়েবসাইটে গত জুলাই মাসে ‘ক্লিয়ার প্রোটিন’ অনুসন্ধানের হার ১১ শতাংশ বেড়েছে। এটি টানা সপ্তম মাস ধরে তাদের শীর্ষ অনুসন্ধানী বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম।

অনেক ব্যবহারকারীর মতে, প্রচলিত ক্রিম বা দুধভিত্তিক শেকের চেয়ে এটি হালকা হওয়ায় পান করতে বেশ সতেজ অনুভূতি দেয়। বাজারে এরই মধ্যে আইসোপিওর প্রোটিন ওয়াটার, প্রিমিয়ার প্রোটিন ক্লিয়ার এবং রাইজের মতো ব্র্যান্ডগুলোর প্রস্তুত পানীয় পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ড লেবুর রস, ট্রপিক্যাল পাঞ্চসহ নানা ফলের স্বাদের আইসোলেট পাউডারও বিক্রি করছে।

নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ লরেন মানাকার সম্প্রতি ভোগ সাময়িকীকে জানিয়েছেন, ‘যারা ভারী শেকের পরিবর্তে হালকা কিছু খুঁজছিলেন, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ বিকল্প। দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় এবং চলার পথে সহজে গ্রহণ করার উপযোগী হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে’।

হোয়ে প্রোটিন আইসোলেটে সাধারণত কনসেন্ট্রেটের তুলনায় চর্বি, শর্করা, ক্যালরি এবং ল্যাকটোজের পরিমাণ কম থাকে। ফলে যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এছাড়া এতে প্রোটিনের ঘনত্বও তুলনামূলকভাবে বেশি।

তবে অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের মুখপাত্র ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ লেনা বিলের মতে, আইসোলেট এবং কনসেন্ট্রেট উভয় ধরনের প্রোটিনেই প্রতি পরিবেশনে সাধারণত ২০ থেকে ২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। দুটিই শরীরে দ্রুত শোষিত হয়, যদিও আইসোলেট কিছুটা দ্রুত কাজ করতে পারে।

লেনা বিল টুডে ডটকমকে বলেন, ‘ক্লিয়ার প্রোটিন যে ডিফল্টরূপে বেশি স্বাস্থ্যকর, তা নয়। এটি একই প্রোটিন, কেবল ভিন্ন এবং হালকা রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে’। তিনি আরও জানান, এই পণ্যটি নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে হাসপাতালে রোগীদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এর ব্যবহার হয়ে আসছে, বিশেষ করে যখন তারা স্বাভাবিক খাবার গ্রহণে অক্ষম থাকেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ক্লিয়ার প্রোটিনে প্রায়শই কৃত্রিম গন্ধ ও মিষ্টি যোগ করা হয়, কারণ এতে প্রাকৃতিক স্বাদ বাড়ানোর জন্য চর্বি বা চিনি থাকে না। এছাড়া এটি প্রচলিত প্রোটিন পাউডারের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুলও হতে পারে।

লরেন মানাকার বলেন, ‘যতক্ষণ না আমাদের কাছে ভিন্ন কিছু প্রমাণ করার মতো তথ্য আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনোটিকেই স্বাভাবিকভাবে অন্যটির চেয়ে ভালো বলা যাবে না। আপনার লক্ষ্য এবং জীবনযাত্রার সঙ্গে কোনটি খাপ খায়, সেটাই মূল বিষয়’।

সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতি কেজি শরীরের ওজনে ০.৮ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ক্রীড়াবিদ, বয়স্ক এবং গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য বিশেষজ্ঞরা এর চেয়ে বেশি প্রোটিন গ্রহণের সুপারিশ করেন।