ইসলামী ব্যাংকের মুনাফায় ৮১ শতাংশ ধস

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ইসলামী ব্যাংকের মুনাফায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। ব্যাংকটির মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯০ কোটি টাকা বা ৮১ শতাংশ কমে মাত্র ৬৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে এই মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩৫৭ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, মূলত আমানতকারীদেরকে মুনাফা প্রদান বাবদ ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়াই এই মুনাফা পতনের প্রধান কারণ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির বিনিয়োগ থেকে আয় বেড়েছে ২৫২ কোটি টাকা, যা মোট ৬ হাজার ১৮৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু একই সময়ে আমানতকারীদের মুনাফা প্রদান বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ, বিনিয়োগ থেকে আয় যে হারে বেড়েছে, মুনাফা প্রদান বাবদ ব্যয় বেড়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

গত বছরের আগস্টে ব্যাংকটির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসার পর থেকেই মূলত এই পরিস্থিতির শুরু। এর আগে ২০১৭ সাল থেকে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল ব্যাংকটি। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয়, যার বড় একটি অংশ এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। এসব বিনিয়োগের মুনাফা বা আসল কোনোটাই আদায় না হওয়ায় ব্যাংকটি তারল্য সংকটে পড়ে।

এই সংকট কাটাতে ব্যাংকটি উচ্চ মুনাফার প্রতিশ্রুতিতে আমানত সংগ্রহে মনোযোগ দেয়। গত এক বছরে ব্যাংকটি নতুন করে ২৩ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে, ফলে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই আমানতের বিপরীতে মুনাফা পরিশোধ করতে গিয়েই ব্যাংকটির মুনাফায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, খেলাপি বিনিয়োগের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং সংরক্ষণে ব্যাংকটিকে বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রভিশনিং বাবদ মাত্র ৭০ কোটি টাকা রাখতে হয়েছে, যেখানে গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩৭৭ কোটি টাকা। প্রভিশনিংয়ে বড় ছাড় পাওয়ার পরও কেবল আমানতের বিপরীতে ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকটির মুনাফা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।