স্পেন-ইসরায়েল সম্পর্ক: উত্তেজনার পারদ চরমে

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তরের এক মন্তব্যকে ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ বলে আখ্যা দিয়েছে স্প্যানিশ সরকার। বৃহস্পতিবার স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্পেন যেকোনো ধরনের ইহুদিবিদ্বেষ, বর্ণবাদ এবং অসহিষ্ণুতাকে প্রত্যাখ্যান করে।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ আইনের অধীনে প্রায় ৭২ হাজার সেফার্ডিক ইহুদিকে নাগরিকত্ব দিয়েছে এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার প্রথম দিন থেকেই নিন্দা জানিয়ে আসছে।

এর আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ গণহত্যামূলক হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তারা লেখে, ‘স্পষ্টতই, স্প্যানিশ ইনকুইজিশন, স্পেন থেকে ইহুদিদের বিতাড়ন এবং হলোকাস্টে ইহুদিদের পদ্ধতিগত গণহত্যা সানচেজের জন্য যথেষ্ট নয়। অবিশ্বাস্য!’

ওই পোস্টে সোমবার দেওয়া সানচেজের একটি মন্তব্য উল্লেখ করা হয়, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা জানেন, স্পেনের পারমাণবিক বোমা, বিমানবাহী রণতরী বা বড় তেলের মজুদ নেই। আমরা একা ইসরায়েলি হামলা থামাতে পারব না, তবে তার মানে এই নয় যে আমরা চেষ্টা করা বন্ধ করে দেবো।’ সেদিন সানচেজ গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে তা বন্ধ করতে নয়টি পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের কট্টরপন্থী মন্ত্রীদের স্পেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, স্থায়ী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা।

এই ঘটনার জেরে ইসরায়েল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ আনে এবং স্পেনের দুজন মন্ত্রীকে ইসরায়েলে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় স্পেন তেল আবিব থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়।

বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে স্পেন গাজায় চলমান ‘অনির্দিষ্টকালের সহিংসতা’ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে বলা হয়েছে। মাদ্রিদ জানিয়েছে, তারা দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে, যেখানে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে পাশাপাশি বসবাস করবে।

স্প্যানিশ সরকার আরও জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রক্রিয়াগুলোর প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার মামলা।