ফ্রান্স: শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই ‘একমাত্র সমাধান’

ফ্রান্সের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো বলেছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রই এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার একমাত্র সমাধান। তিনি ইসরায়েলের মানবিক অধিকার লঙ্ঘন, গাজায় দুর্ভিক্ষ এবং পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের কড়া সমালোচনা করে ইসরায়েলি সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর কথা উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে জানান, পোল্যান্ডে ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনার জেরে রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করবে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ব্রডকাস্টার ফ্রান্স ইন্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো শুক্রবার বলেন, ‘আমি বলছি যে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র অবশ্যই হবে, কারণ এটিই এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম একমাত্র সমাধান। স্থায়ী যুদ্ধাবস্থার এটিই একমাত্র বিকল্প।’

ইসরায়েলের মানবিক অধিকার সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করতে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি ইসরায়েলি সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর তাদের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন। ব্যারো জোর দিয়ে বলেন, ‘গাজায় যা ঘটছে, দুর্ভিক্ষ, পশ্চিম তীরে যা ঘটছে, বসতি স্থাপন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ওপর আর্থিক অবরোধ—এসব কিছুই অগ্রহণযোগ্য। আমরা ইসরায়েলি জনগণের ওপর নয়, ইসরায়েলি সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চাই।’

তার এই মন্তব্য এসেছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তথাকথিত ই-১ পরিকল্পনার অধীনে বসতি সম্প্রসারণের একটি চুক্তিতে বৃহস্পতিবার স্বাক্ষর করার ঘোষণার পর। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, দখলকৃত পশ্চিম তীরকে দু'ভাগে বিভক্ত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

জেরুজালেমের পূর্বে মা'আলে আদুমিম বসতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু জানান, তিনি শহরের কাছে বেশ কয়েকটি বসতি পরিষদের প্রধানদের সঙ্গে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বসতি সম্প্রসারণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই প্রকল্পে মা'আলে আদুমিম এবং এর আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার বসতি স্থাপনকারীর আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য পশ্চিম তীরকে দু'ভাগে ভাগ করা। এর ফলে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোর মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং পূর্ব জেরুজালেম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

ফিলিস্তিনিরা সতর্ক করে জানিয়েছে যে এই প্রকল্পটি নেতানিয়াহুর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণার অংশ। তারা আরও সতর্ক করে যে এর মাধ্যমে দখল আরও সুদৃঢ় হবে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কার্যকারিতা চিরতরে মুছে যাবে।

এদিকে, ব্যারো আরও জানান যে পোল্যান্ডে ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনার জেরে রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করার পরিকল্পনা করেছে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফ্রান্স দেখাতে চায় যে তারা ‘ভীতসন্ত্রস্ত হবে না’ এবং রাশিয়াকে ইউরোপকে ‘পরীক্ষা করা’ ও ‘ভয় দেখানোর’ চেষ্টা বন্ধ করার আহ্বান জানাবে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই অনুপ্রবেশগুলো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। এটি রাশিয়া কর্তৃক আমাদের ভীতসন্ত্রস্ত করা এবং পরীক্ষা করার একটি সুচিন্তিত কৌশল।’

ব্যারো আরও জোর দিয়ে বলেন যে ইউরোপীয় এবং ন্যাটোর মিত্ররা ঐক্যবদ্ধ নয়—এমনটা ভাবলে রাশিয়া একটি ‘গুরুতর ভুল’ করবে।

পোল্যান্ড বুধবার জানায়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে রাতব্যাপী বিমান হামলার সময় ড্রোন দ্বারা তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘিত হয়েছে, যাকে তারা ‘আগ্রাসনের কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তুষ্ক ড্রোনগুলোকে ‘রুশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ১৯টি আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা রেকর্ড করে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই হামলার সময় পোলিশ ভূখণ্ডে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার উদ্দেশ্য অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করে যে এসব হামলায় পশ্চিম ইউক্রেনে কিয়েভের সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। মস্কো ওয়ারশ-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তুতিও প্রকাশ করেছে।