নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সুশীলা কার্কি

নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিলেন সুশীলা কার্কি। কেপি শর্মা ওলি প্রশাসনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভের কয়েক দিনের মাথায় তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় শীতল নিবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সুশীলা কার্কিকে শপথ পড়ান দেশটির প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল।

ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করাই হবে এই নতুন সরকারের প্রধান কাজ। ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইউ) প্রাক্তনী সুশীলা কার্কিকে বেছে নেওয়ার আগে আরও তিনজন প্রার্থী আলোচনায় ছিলেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট পাউডেল, সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল এবং ‘জেন জি’ নামে পরিচিত তরুণ বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বিবেচিত অন্য প্রার্থীরা ছিলেন নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান কুলমান ঘিসিং, কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ এবং ধরান শহরের মেয়র হারকা সাম্পাং।

নেপালে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। তবে দ্রুতই তা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত আন্দোলনে রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন, রাজনীতিবিদদের বাসভবন এবং সংসদে অগ্নিসংযোগ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঠমান্ডু জুড়ে সেনা মোতায়েন করা হয়।

কে এই সুশীলা কার্কি?

সুশীলা কার্কি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তবে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আইনপ্রণেতারা তার বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেওয়া’ এবং ‘নির্বাহী বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপের’ অভিযোগে অভিশংসন প্রস্তাব আনেন। পুলিশ প্রধান নিয়োগে সরকারের একটি সিদ্ধান্ত নেপালের সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করে দেওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, জ্যেষ্ঠতাকে অন্যায়ভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।

অভিশংসন প্রস্তাবটি তদন্তাধীন থাকায় তিনি সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন। তবে ২০১৭ সালের জুন মাসে তার অবসরের আগে প্রস্তাবটি প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়।

১৯৫২ সালের ৭ জুন বিরাটগরে জন্মগ্রহণ করেন সাবেক এই আইনবিদ। তিনি ১৯৭৫ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এবং ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগে তিনি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং আইনের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লিঙ্গ সমতা বিষয়ে তিনি একজন লেখক এবং দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে জড়িত। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ‘সম্ভাব কানুন পুরস্কার’ (২০০৪) সহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন।