গাজায় ফিরতে নারাজ ইসরায়েলি সৈন্য ও তাদের মায়েরা

গাজা সিটিতে নতুন করে অভিযান পরিচালনার জন্য হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে তলব করেছে ইসরায়েল। তবে সরকারের এই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে অনেকেই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। শাস্তির ঝুঁকি সত্ত্বেও অনেক সেনা সদস্য ও তাদের অভিভাবকেরা এই সিদ্ধান্তের প্রকাশ্য বিরোধিতা করছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রথমবারের মতো এমন সংগঠিত বিরোধী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। যেখানে সৈন্যরা নিজেরা বা পরিবারের মাধ্যমে প্রকাশ্যে গাজায় পুনরায় মোতায়েনের বিরোধিতা করছেন। কারাদণ্ডের মতো শাস্তির ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও দিন দিন এই বিরোধিতার মাত্রা বাড়ছে, যা ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন অধ্যায়। যদিও এটি এখনও ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে বড় কোনো প্রভাব ফেলেনি, তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্তরে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কিছু সেনা পরিবারে আতঙ্ক এতটাই বেড়েছে যে, তারা সন্তানদের যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে যেকোনো উপায় খুঁজছেন। নুরিত ফেলসেনথাল-বার্গার নামের এক নারী তার ছোট ছেলেকে যুদ্ধে পাঠাতে বাধ্য হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবে ঠিক করতে পারিনি, কীভাবে তার পা ভাঙব, তার হাত ভাঙব, অন্তত কোনোভাবে তাকে আহত করব- যাতে সে আর যুদ্ধে যেতে না পারে। আমি চাই না, সে এই যুদ্ধে মারা যাক।’

২৮ বছর বয়সি সৈনিক আভশালোম জোহর সাল বলেন, ‘আমরা এখন ক্লান্ত, হতাশ এবং জানি না কী জন্য যুদ্ধ করছি।’ গাজায় একাধিকবার দায়িত্ব পালন করা এই সেনার মতে, একই এলাকায় বারবার ফিরে যাওয়া এবং নতুন করে সংঘর্ষে জড়ানোর বিষয়টি তাদের মনোবলে চিড় ধরাচ্ছে।

আরেক সৈনিকের মা ইয়াফাত গাদোত বলেন, ‘আমার ছেলে বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের সৈনিকেরা জীবন্ত হাঁসের মতো একেকটি টার্গেট।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি, আমরা মায়েরা যা পারি করব, তোমাকে গাজা থেকে ফিরিয়ে আনতে।’ সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে স্থল আক্রমণ শুরুর পর থেকে ৪৫০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে।

‘সোলজারস ফর হোস্টেজেস’ নামের একটি গোষ্ঠী দাবি করছে, ৩৬০ জনের বেশি সৈনিক এখন গাজায় ফেরত যেতে অস্বীকার করছে। প্রায় এক হাজার অভিভাবকের প্রতিনিধিত্বকারী ‘প্যারেন্টস অব কমব্যাট সোলজার্স শাউট এনাফ’ নামের আরেকটি সংগঠন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির বিরোধিতা করছে। তারা সন্তানদের ‘রাজনৈতিক স্বার্থের যুদ্ধে’ বলি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ২০০০ সালে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ১৮ বছরের দখলদারিত্ব অবসানে একই ধরনের একটি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ইসরায়েলের ভেতরেই অভিযোগ উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন এবং হামাসের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতায় যেতে আগ্রহী নন। বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির বড় একটি অংশ এবং সাবেক উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করছেন, নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক গাজা অভিযান কোনো ফল বয়ে আনবে না, বরং জিম্মিদের জীবন আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। একই সঙ্গে, গাজায় যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।