লালনগীতির কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন মারা গেছেন

বাংলা লোকসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন মারা গেছেন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্বামী ও চার সন্তান রেখে গেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। নিয়মিত ডায়ালাইসিসের জন্য ২ সেপ্টেম্বর তাকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে এবং পরবর্তীতে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া উপজেলায় জন্ম নেন ফরিদা পারভীন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে নজরুলসংগীত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে তার পেশাদার সংগীতজীবনের সূচনা। শৈশবে মাগুরায় ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষা নেন। এরপর নজরুলসংগীত, আধুনিক গান থেকে ধীরে ধীরে লালনগীতির পথে যাত্রা শুরু হয় তার।

লালনসংগীতের পথে তার যাত্রা শুরু হয় কুষ্টিয়ার সংগীতগুরু মকছেদ আলী সাঁইয়ের হাত ধরে। ১৯৭৩ সালে ‘সত্য বল সুপথে চল’ গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে লালনগীতিতে নতুন অধ্যায় রচনা করেন তিনি। এরপর ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁইসহ বহু গুণীজনের কাছে তালিম নিয়ে লালনগীতি চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যান।

বাংলাদেশে লালন সাঁইয়ের দর্শন ও গানের সুরকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন ফরিদা পারভীন। তিনি শুধু দেশেই নয়, জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বব্যাপী লালনের গান পরিবেশন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের লোকসংগীতের মর্যাদা বাড়ান।

১৯৮৭ সালে সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক পান তিনি। ১৯৯৩ সালে ‘অন্ধ প্রেম’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘নিন্দার কাঁটা গানের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লালনগীতি প্রচারের স্বীকৃতি হিসেবে ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার পুরস্কার পান।