দুশ্চিন্তা কমাতে হৃদরোগের ঔষধের ওপর ঝুঁকছে মানুষ!

হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পুরোনো একটি ঔষধ, বিটা ব্লকার এখন উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মূলত হৃদযন্ত্রের জন্য তৈরি হলেও, এই ঔষধটি এখন অনেকেই মানসিক চাপ মোকাবিলার জন্য ব্যবহার করছেন, যার ফলে এর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে প্রপ্রানোললের ব্যবস্থাপত্র প্রায় ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রপ্রানোলল নামে পরিচিত এই ঔষধটি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) ১৯৬৭ সালে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দিয়েছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন তারকাদের মধ্যে উদ্বেগ কমাতে এর ব্যবহার জনপ্রিয়তা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। এ বছরের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী র‌্যাচেল সেনট বলেন, ‘ওই বিটা ব্লকারটা নিয়ে নাও মেয়ে। গিলে ফেলো আর মনোযোগ দাও... অনুভূতিহীনতাই এখন নতুন ধারা।’

একইভাবে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব পেইজ ডেসোরবোও হঠাৎ আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি সামলাতে বিটা ব্লকার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি জানান, এই ঔষধ সেবনের পর তিনি মঞ্চে স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে পেরেছিলেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যামেন ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ড্যানিয়েল অ্যামেন জানান, বিটা ব্লকার মূলত শরীরের মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়াকে শান্ত করে। তিনি সাধারণত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে রোগীদের প্রথমে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ধ্যানের মতো প্রাকৃতিক কৌশলের পরামর্শ দেন। তবে তিনি উল্লেখ করেন, অনেক সময় স্নায়ুতন্ত্র এই কৌশলগুলোকে ছাপিয়ে যায় এবং তখনই বিটা ব্লকার সহায়ক হতে পারে।

এই ঔষধটি শরীরে অ্যাড্রেনালিনের প্রভাবকে বাধা দেয়, যা হৃদস্পন্দন কমায়, শ্বাস-প্রশ্বাসকে স্থির করে এবং শারীরিক উদ্বেগের লক্ষণগুলো হ্রাস করে। ড. অ্যামেন বলেন, ‘যখন আপনার শরীর মনে করে যে সে আক্রমণের শিকার, বিটা ব্লকার স্নায়ুতন্ত্রে বাজতে থাকা সেই ‘মিথ্যা বিপদ সংকেত’ শান্ত করতে সাহায্য করে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এগুলো আপনাকে ঘুম এনে দেয় না বা আপনার চিন্তাভাবনাকে ঘোলাটে করে না। বরং এটি আপনার শরীরের ওপর আপনাকে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেয়।’

তবে এই ঔষধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সতর্কতা রয়েছে। ড. অ্যামেন উল্লেখ করেছেন, অন্যান্য উদ্বেগ-রোধী ঔষধের মতো বিটা ব্লকার আসক্তি তৈরি করে না বা এটি ছাড়ার পর মারাত্মক কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে শুরুতে কিছুটা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে। যাদের হাঁপানি, ডায়াবেটিস বা নির্দিষ্ট ধরনের হৃদরোগ রয়েছে, তাদের এই ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যারা প্রতিদিন এটি গ্রহণ করছেন, তাদের হঠাৎ করে ঔষধটি বন্ধ করা উচিত নয়।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিটা ব্লকার বেশিরভাগ মানুষের জন্য বেশ নিরাপদ এবং আসক্তিহীন একটি ঔষধ। ড. অ্যামেন জনসমক্ষে কথা বলার ভীতি আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এটিকে প্রথম সারির ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিটা ব্লকার কোনো ‘জাদুকরি বড়ি’ নয় এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সঙ্গে এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে।