আমূল পরিবর্তনের পথে পরিসংখ্যান ব্যুরো, নাম বদলেরও প্রস্তাব

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নাম পরিবর্তন করে ‘স্ট্যাটিস্টিকস বাংলাদেশ’ (স্ট্যাটবিডি) রাখার প্রস্তাব করেছে সংস্থাটিকে শক্তিশালী করতে গঠিত একটি স্বাধীন টাস্কফোর্স। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের পদকে ‘প্রধান পরিসংখ্যানবিদ’ হিসেবে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে, যা একটি বিশেষ স্কেলভুক্ত পদ। সোমবার পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কাছে টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা তাদের খসড়া প্রতিবেদনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পরিসংখ্যান সংস্থার কার্যক্রম তদারকির জন্য পরিকল্পনা উপদেষ্টার নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের ‘ট্রাস্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি কাউন্সিল অব স্ট্যাটিস্টিকস (টিটিসিএস)’ গঠন করা হবে। এই কাউন্সিল প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধান, বার্ষিক কর্মক্ষমতা ও ব্যয় নিরীক্ষা পর্যালোচনা এবং প্রধান পরিসংখ্যানবিদ নির্বাচন প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকবে।

প্রতিবেদনে ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান আইন সংশোধনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো, ডেটা যাচাই ও প্রকাশসহ সব ধরনের প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্তে স্ট্যাটবিডির স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা এবং সরকারি পরিসংখ্যানকে যেকোনো প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখা।

প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘদিনের জনবল সংকট ও কাঠামোগত দুর্বলতা নিরসনেও একাধিক সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাংগঠনিক কাঠামো আটটি থেকে বাড়িয়ে ষোলটি শাখায় উন্নীত করা এবং তৃণমূল পর্যায়ে কাজের গতি বাড়াতে ৪৩৭টি নতুন উপজেলা পর্যায়ের পদ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, পরিসংখ্যানবিদদের জন্য একটি সমন্বিত পেশাগত ক্যারিয়ার নিশ্চিতে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার সার্ভিস একীভূত করারও প্রস্তাব রয়েছে।

আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতে বাজেটে বড় পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ জরিপ কার্যক্রমের জন্য একটি নিবেদিত রাজস্ব তহবিল গঠন এবং বার্ষিক জরিপ কার্যক্রম স্থিতিশীল করতে জরুরি ভিত্তিতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া, জনসাধারণের আস্থা বাড়াতে উন্মুক্ত ডেটা ও প্রকাশনা নীতি চালুর প্রস্তাব করা হয়, যার আওতায় পূর্বঘোষিত ক্যালেন্ডার মেনে তথ্য প্রকাশ এবং ব্যবহারকারীদের জন্য সম্পূর্ণ মেটাডেটা উন্মুক্ত থাকবে।

দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘স্ট্যাটবিডি প্রশিক্ষণ একাডেমি’ হিসেবে গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি জরিপের মান ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় একটি ‘মেথোডোলজিক্যাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাবও রয়েছে।

এই সংস্কারগুলো স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা উপদেষ্টার নেতৃত্বে অবিলম্বে একটি ‘সুপারিশ বাস্তবায়ন কার্যদল’ গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। পিপিআরসি-র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে গঠিত এই টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা হলেন—বিবিএসের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, আইএসআরটির অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদাত হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আতনু রব্বানী ও বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনূস।