গাজায় গণহত্যা চলছে, জাতিসংঘ তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ

জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ শীর্ষ ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উসকানি দিয়েছেন। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত কমিশনের ৭২ পৃষ্ঠার বিশ্লেষণধর্মী আইনি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, মানবিক সহায়তা বন্ধ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতকরণ এবং এমনকি একটি ফার্টিলিটি ক্লিনিক ধ্বংসের ঘটনাও গণহত্যার প্রমাণ বহন করে।

কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লে, যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক বিচারক ও রুয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে কাজ করা ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, একে ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনের আলোকে কমিশন জানায়, ইসরায়েল অন্তত চারটি অপরাধ সংঘটিত করেছে- হত্যা, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন, জীবনের জন্য এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যা গাজাবাসীর ধ্বংস ডেকে আনতে পারে এবং জন্ম রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ।

তদন্তে সাক্ষাৎকার, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, চিকিৎসকদের প্রতিবেদন, যাচাইকৃত নথি ও স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট, সকলেই গাজায় চলমান অভিযানকে ‘পবিত্র যুদ্ধ’ বা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ’ আখ্যা দিয়ে সরাসরি গণহত্যার উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছেন।

পিল্লে বলেন, রুয়ান্ডায় যেভাবে ভিকটিমদের অমানবিক করে পশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল, গাজাতেও একই কৌশল দেখা যাচ্ছে। এভাবে ভিকটিমদের অমানবিক করলে তাদের হত্যা করতে কারও বিবেক কাজ করে না।

ইসরায়েল কমিশনের সঙ্গে কোনো সহযোগিতা করেনি। দেশটির জেনেভা মিশন অভিযোগ করেছে, কমিশনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে এবং এটি ‘হামাসের প্রচারণার’ ওপর নির্ভর করেছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনের দাবিকে ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের পাল্টা হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জন জিম্মি হয় বলে ইসরায়েলের দাবি। এর পর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গাজার কিছু অংশ এখন দুর্ভিক্ষের মুখে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বর্তমানে হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলা চলছে। যদিও জাতিসংঘ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেনি, কিন্তু এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক চাপ আরও জোরদার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।