৭ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, বিএনপির কঠোর বার্তা

দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অসদাচরণের অভিযোগে দলের সাত হাজারের বেশি সদস্যের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই পদক্ষেপকে দলের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান জানান, বহুমুখী অপপ্রচারের মধ্যেও এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় এগুলো প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলা কোনো দুর্বলতা নয়; বরং সেটিই আমাদের শক্তি। নিজেদের সদস্যদের দায়বদ্ধ করার মাধ্যমেই আবারও প্রমাণ হলো যে, বিএনপি সততার ব্যাপারে আন্তরিক’। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ক্ষমতাসীনদের কাছে যে মানদণ্ড দাবি করা হয়, বিএনপি নিজেদেরও সেই একই মানদণ্ডে দাঁড় করাতে চায়।

আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের আস্থা অর্জনকে অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হিসেবে দেখছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তারেক রহমান বলেন, এই সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বিএনপি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায়, যা তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।

তিনি বলেন, তরুণরা বাস্তব সুযোগ চায়, ফাঁকা প্রতিশ্রুতি নয়। দেশের জনগণ স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করে, কোনো বিশৃঙ্খলা নয়। বিএনপি এই প্রত্যাশা পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তার মতে, তরুণদের আস্থা পুনর্গঠন করা বিশেষভাবে জরুরি, যারা রাজনীতিকে শুধু ক্ষমতার খেলা হিসেবে না দেখে সবার অংশগ্রহণে একটি মহৎ ক্ষেত্র হিসেবে দেখতে চায়।

সময়ের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপি নিজেদের আধুনিকায়ন করছে জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, তরুণদের কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ৩১ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনীতিতে আরও বেশি নারী, তরুণ নেতা ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিএনপি নিজেদের সেবা, ন্যায়বিচার ও দক্ষতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

দলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। তাদের সেই আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখেই বিএনপি নতুন যুগে সততা, তরুণ নেতৃত্ব ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে রাষ্ট্রগঠনের ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং জনগণের সেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যেমন আপনাদের প্রত্যেকের ওপর আস্থা রাখি, আপনারাও তেমনি আমার ওপর আস্থা রাখুন। তাহলেই গণতন্ত্রের পথ হবে আরও উজ্জ্বল’।