হাঁটুর চিকিৎসায় তুরস্কের যুগান্তকারী সাফল্য, ইমপ্ল্যান্ট ছাড়াই হাঁটুর লিগামেন্ট পুনর্গঠনের নতুন কৌশল

তুরস্কের শল্যচিকিৎসকদের উদ্ভাবিত ‘অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট’ (এসিএল) পুনর্গঠনের একটি ইমপ্ল্যান্টবিহীন কৌশল বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা জগতে সাড়া ফেলেছে। ‘কোজাবে প্রেস ফিট’ নামের এই পদ্ধতি রোগীদের দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে এবং বিদেশি চিকিৎসকেরা এটি শিখতে তুরস্কে আসছেন।

সম্প্রতি রোমানিয়া ও গ্রিস থেকে কয়েকজন চিকিৎসক এই কৌশলটি সরাসরি দেখতে তুরস্কে সফর করেন। কানুনী সুলতান সুলেমান প্রশিক্ষণ ও গবেষণা হাসপাতালের অর্থোপেডিকস এবং ট্রমাটোলজি বিভাগের প্রধান ডা. জেমিল এরতুর্ক ও তার দলের সঙ্গে মিলে এই অস্ত্রোপচারটি করে দেখান তুর্কি সোসাইটি অব স্পোর্টস ইনজুরিস, আর্থ্রোস্কোপি অ্যান্ড নি সার্জারির (তুসিয়াদ) সভাপতি ডা. ইয়াভুজ কোজাবে। তিন বছর আগে তিনিই এই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।

ডা. কোজাবে আনাদোলু এজেন্সিকে জানান, গত তিন বছরে তিনি প্রায় ৫০০ রোগীর ওপর এই কৌশল প্রয়োগ করেছেন। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে কোনো ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করতে হয় না, ফলে রক্তক্ষরণ ও ফোলাভাবের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং রোগীরাও খুব কম ব্যথায় দ্রুত সুস্থ হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, অস্ত্রোপচারের পরের দিনই রোগীরা স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করতে পারেন এবং হাঁটু ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকা করতে পারেন।

ডা. কোজাবে বলেন, ‘অতীতে বছরের পর বছর ধরে ‘বোন-প্যাটেলার টেন্ডন-বোন’ (বিটিবি) পদ্ধতিকে চিকিৎসার সেরা মান হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সেই পদ্ধতির তুলনায় আমাদের কৌশলটি রোগীদের অনেক দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।’ তিনি আরও যোগ করেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে তার নামে পরিচিতি পাওয়া এই কৌশলটি আগামী মাসে পোল্যান্ডের একটি চিকিৎসা সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। ‘তুরস্কে উদ্ভাবিত একটি অস্ত্রোপচার কৌশল বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেখে আমরা গর্বিত।’

ডা. এরতুর্ক উল্লেখ করেন, উদ্ভাবনের পর থেকেই তাদের চিকিৎসাকেন্দ্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এতে তারা দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। তিনি জানান, এসিএল পুনর্গঠনের বিদ্যমান দুটি প্রধান পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করে সেগুলোর সুবিধা একত্রিত করার লক্ষ্যে এই কৌশলটি তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি এখন আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে।’

ডা. এরতুর্ক আরও জানান, তুরস্কের বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা হাসপাতালে ইতোমধ্যে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটি নতুন পর্বে প্রবেশ করছি। বিদেশি সহকর্মীরা এখন সরাসরি অস্ত্রোপচার দেখতে আসছেন, যা তাদের প্রশ্ন করার এবং অস্ত্রোপচার কক্ষে কৌশলটি সরাসরি দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো এই পদ্ধতিটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।’