রপ্তানি অর্ধেকে, ধসের মুখে সৈয়দপুরের ঝুট গার্মেন্টস শিল্প

নীলফামারীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র সৈয়দপুরে রেডিমেড পোশাক রপ্তানিতে বড় ধস নেমেছে। ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি এসব পোশাকের রপ্তানি হঠাৎ অর্ধেকে নেমে আসায় স্থানীয় অর্থনীতি ও শত শত পরিবারের জীবিকা চরম সংকটে পড়েছে।

এদিকে ভারতের সাত ধরনের পণ্যের আমদানি স্থগিতের কারণে এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে এক্সপোর্টেবল স্মল গার্মেন্টস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইএসজিওএ)। 

ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে গার্মেন্টস আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় সৈয়দপুর থেকে পোশাক রপ্তানি ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ফলে কর্মসংস্থান ও আয়ের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সমুদ্রপথে রপ্তানি করা এখন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে। আগে যেখানে ২০ হাজার টাকায় পণ্য পাঠানো যেত, এখন সেই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এতে পণ্য পৌঁছাতে সময়ও লাগছে ২০-২৫ দিন।

পাকিস্তান আমল থেকে শুরু হওয়া সৈয়দপুরের ঝুটভিত্তিক গার্মেন্টস শিল্পে স্থানীয় উদ্যোক্তারা ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ঝুট কাপড় এনে সারা বছর ধরে উৎপাদন চালিয়ে আসছিলেন।

প্রায় প্রতিটি পরিবারই ছোট ছোট কারখানায় ২ থেকে ৪৫টি সেলাই মেশিন দিয়ে প্যান্ট, শার্ট, জ্যাকেট, জিনস ও টি-শার্ট তৈরি করত। এই শিল্পের ওপর নির্ভর করছে অন্তত ৫০০ পরিবার। রপ্তানির বড় অংশ যেত ভারত, নেপাল ও ভুটানে।

কিন্তু ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর উৎপাদন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। অনেক কারখানায় কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে।

সৈয়দপুরের ইনভেন্ট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মালিক হুমায়ুন কবীর বলেন,আমরা প্রতিবছর অন্তত ৫ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করতাম ভারত, নেপাল ও ভুটানে। এখন রপ্তানি অর্ধেকে নেমে গেছে। খরচ ও সময় এত বেড়ে গেছে যে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এইচআর গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুজন আলী অভিযোগ করে বলেন, আগে ২ দিনে পণ্য ভারত পৌঁছাতো, এখন সময় লাগছে প্রায় এক মাস। এই ক্ষতির কথা আমরা কার কাছে বলব?

অন্য এক উদ্যোক্তা ফারহাদ হোসেন বলেন, অনেক কারখানা কর্মী ছাঁটাই করছে। একসময় প্রাণচঞ্চল কর্মপরিবেশ এখন স্তব্ধ হয়ে গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৭ কোটি ডলারের পোশাক ভারত রপ্তানি হতো। এর ৯৩% যেত স্থলপথে। এই রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আঞ্চলিক অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্মল গার্মেন্টস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি আরশাদ আমির পাপ্পু সতর্ক করে বলেন, শত শত ছোট কারখানা হুমকির মুখে। দুই দেশের সরকারকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে, না হলে সৈয়দপুরের অর্থনীতির চাকা থেমে যাবে।