গাজা-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও জাতিসংঘ সংস্কারের জোর দাবি ভারতের

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ইউক্রেন ও গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেকোনো উদ্যোগে ভারতের সমর্থনের আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে তিনি বিশ্ব সংস্থাটিকে ‘সংকটে পড়া প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন।

জয়শঙ্কর বলেন, ‘সংঘাতের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইউক্রেন ও গাজায় যারা সরাসরি জড়িত নয়, তারাও এর প্রভাব অনুভব করছে। এই পরিস্থিতিতে যেসব দেশ সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারে, সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, তাদের এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত। ভারত যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং শান্তি পুনরুদ্ধারের যেকোনো প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসনে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৫ হাজার ৯২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

বিশ্ব বাণিজ্যে চলমান অনিশ্চয়তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জয়শঙ্কর। যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত করারোপের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব আজ ট্যারিফের ওঠানামা, সীমিত বাজার প্রবেশাধিকার এবং প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের মতো নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।’ ভারতের তেল আমদানি ও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র গত আগস্টে দেশটির ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ আরোপ করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরবরাহের সীমিত উৎস বা কোনো নির্দিষ্ট বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে ঝুঁকি কমানো একটি ক্রমবর্ধমান বাধ্যবাধকতা হয়ে উঠেছে। নয়াদিল্লি এ বিষয়ে সবসময় তার স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখবে এবং কারও চাপে চলবে না।’

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রগতির গতি অত্যন্ত ধীর, যা গোটা বিশ্বে জলবায়ু ন্যায়বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যদি জলবায়ু কর্মকাণ্ড নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে জলবায়ু ন্যায়ের জন্য কী আশা রয়েছে?’

জাতিসংঘের সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ‘বিশ্ব সংস্থায় সংস্কারের প্রতিরোধ এ সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতার হ্রাসের কেন্দ্রবিন্দু। আজকের জগতে যেখানে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ক্রমবর্ধমান, সেখানে পুরনো কাঠামোয় চলা সম্ভব নয়।’

কাশ্মিরের পাহেলগাম পর্যটন কেন্দ্রে গত এপ্রিলে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি জানান, ভারত স্বাধীনতার পর থেকেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনে আত্মরক্ষা করেছি এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করেছি।’ নয়াদিল্লি শুরু থেকেই এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে, যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এ হামলার জেরে পরবর্তী মে মাসে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চারদিনের যুদ্ধ হয়, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শেষ হয়।