কাতারের কাছে নেতানিয়াহুর দুঃখ প্রকাশ, পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি

দোহায় চালানো এক হামলার জন্য কাতারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে সোমবার এক ত্রিপক্ষীয় টেলিফোন আলাপে তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানির কাছে এই দুঃখ প্রকাশ করেন। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাতারে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অপ্রত্যাশিতভাবে একজন কাতারি সেনা সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জিম্মি আলোচনার সময় হামাস নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করার জন্যও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে ইসরায়েল এ ধরনের হামলা চালাবে না বলে নিশ্চিত করেছেন।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী আল থানি ইসরায়েলের এই আশ্বাসকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘কাতার আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে প্রস্তুত।’ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও একই ধরনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলায় হামাস নেতা খালিল আল-হাইয়ার প্রধান সহকারী জিহাদ লেবেদ, তার ছেলে হাম্মাম আল-হাইয়া এবং আরও তিনজন সহযোগী নিহত হন। এছাড়া, কাতারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যও এই হামলায় প্রাণ হারান।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ত্রিপক্ষীয় আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি ‘ত্রিপক্ষীয় সমন্বয় কাঠামো’ গঠনের প্রস্তাব দেন। এর মাধ্যমে ইসরায়েল ও কাতার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করবে, বিরোধ নিষ্পত্তি করবে এবং আঞ্চলিক হুমকি মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করবে। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন, এই উদ্যোগের ফলে ইসরায়েল ও কাতারের সম্পর্ক ইতিবাচক দিকে যাবে, যা পারস্পরিক অভিযোগ ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে বছরের পর বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরায়েলের দুঃখ প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, কাতারের প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এর মধ্যে ইসরায়েলি হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে মার্কিন নিশ্চয়তা এবং কাতারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও নিশ্চিত করেছে, নেতানিয়াহু হামলা এবং কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন এবং কাতারের ভূখণ্ডে আর হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে কাতারের প্রধানমন্ত্রী আল থানি তার দেশের সার্বভৌমত্বের যেকোনো লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘কাতারের নাগরিক ও বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’ তিনি মার্কিন আশ্বাস ও ইসরায়েলি প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের উদ্যোগের আওতায় কূটনৈতিকভাবে যুক্ত থাকার জন্য কাতারের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি আরব ও ইসলামি নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি ২১-দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, বন্দী মুক্তি এবং গাজা পরিচালনার জন্য হামাসবিহীন একটি আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের প্রস্তাব রয়েছে।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বাহিনীর непрерыв হামলায় গাজা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ ও রোগের বিস্তার ঘটেছে।