দেশদ্রোহিতার অভিযোগে কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্ট কাবিলার মৃত্যুদণ্ড

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের (ডিআরসি) একটি সামরিক আদালত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলাকে অনুপস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঘোষিত এ রায়ে তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে।

সামরিক ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোসেফ মুতোম্বো কাটালায়ি রায়ে বলেন, ‘কাবিলা দেশদ্রোহিতা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, হত্যা, যৌন নির্যাতন, নির্যাতন, বিদ্রোহসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ফলে সামরিক দণ্ডবিধির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে তাকে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হচ্ছে, সেটি হলো মৃত্যুদণ্ড’। এই রায়ের বিরুদ্ধে কেবল পদ্ধতিগত ত্রুটির অভিযোগে আপিল করা যাবে, তবে মামলার মূল বিষয়ের ওপর আপিলের কোনো সুযোগ নেই।

২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কাবিলা। গত বছর তিনি দেশত্যাগ করলেও সম্প্রতি তাকে পূর্বাঞ্চলীয় এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রিত শহর গোমায় দেখা গিয়েছিল। তবে বিচার চলাকালে তিনি বা তার পক্ষের কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। মঙ্গলবার রায় ঘোষণার পরও তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গত জুলাই মাসে মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, তিনি এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছেন, যারা চলতি বছর দেশটির পূর্বাঞ্চলে বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে। তবে কাবিলা শুরু থেকেই এই মামলাকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ এবং বিচার ব্যবস্থাকে ‘দমন-পীড়নের হাতিয়ার’ বলে অভিহিত করে আসছেন।

এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিকে রুয়ান্ডার সমর্থনপুষ্ট বলে মনে করা হলেও রুয়ান্ডা তা অস্বীকার করেছে। তবে জাতিসংঘের এক তদন্তে এম২৩-এর হামলায় রুয়ান্ডার সামরিক বাহিনীর ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ থাকার কথা বলা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায়ের মূল উদ্দেশ্য হতে পারে কাবিলার রাজনৈতিক প্রভাব খর্ব করা, কারণ তিনি এখনও কঙ্গোর বিরোধী রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। আপাতত তাকে গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা কম। আফ্রিকা বিষয়ক বিশ্লেষক ইনকা অ্যাডেগোক বলেন, ‘কাবিলা অনেকদিন ধরেই প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স চিসেকেদির জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ রায় কাবিলা-সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলতে পারে’।

ডিআর কঙ্গোতে গত বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।

চলতি বছরের জুনে ওয়াশিংটনে কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর জুলাইয়ে কাতারে এম২৩ গোষ্ঠীর সঙ্গে স্থায়ী অস্ত্রবিরতির চুক্তি হলেও সহিংসতা থামেনি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ, সংঘাতরত সব পক্ষই নির্যাতন, গণধর্ষণ ও অপহরণের মতো অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনেও সব পক্ষকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।