ইসলামী ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত ৪৫০০ কর্মকর্তা সরকারের হস্তক্ষেপ চান

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া সাড়ে চার হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে অভিযোগ করেছেন যে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে।

তাদের দাবি, ব্যাংকের ঘোষিত ‘দক্ষতা যাচাই পরীক্ষাতে’ অংশ না নেওয়ায় অন্যায়ভাবে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে তাদের ব্যাংক হিসাবগুলোও ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা।

তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আপনি চট্টগ্রামের সন্তান, চট্টগ্রামের মানুষের প্রতি এই বৈষম্য বন্ধ করুন। ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের পর এমন বাংলাদেশ আশা করিনি।

প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন ছিল বরখাস্ত কর্মকর্তাদের ব্যানার ও ফেস্টুনে ভরা। তারা পুনর্বহালের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা এস এম ইমদাদুল ইসলাম লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, আমাদের মধ্যে ৪৫০০ জনেরও বেশি কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমাদের সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইচ্ছাকৃতভাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের অযোগ্য ও রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

ইমদাদুল বলেন, চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা ছয় দফা দাবি পেশ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে পুনর্বহাল, ব্যাংক হিসাব পুনরায় চালু করা এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রকাশ্য দুঃখপ্রকাশ। কিন্তু এক সপ্তাহ অপেক্ষার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।

চাকরিচ্যুত তানজিনা আফরোজ, যিনি চট্টগ্রামের চৌধুরীহাট শাখায় জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি, আবার কেন নিয়োগ পরীক্ষা দিতে হবে? আমরা তাই বসতে অস্বীকৃতি জানাই। এরপর ৭ অক্টোবর চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাই, তারপর দেখি আমার বেতন অ্যাকাউন্টও বন্ধ।

তিনি আরও বলেন, আমি ২০১৯ সালে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দিয়েছিলাম। সৎভাবে কাজ করেছি, প্রশংসাপত্রও পেয়েছি। এখন আমাকে অযোগ্য বলা হচ্ছে। আমরা এই ব্যাংক গড়েছি নিজের শ্রমে, আর আজ আমাদেরই অস্বীকার করা হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ‘দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার’ ঘোষণা দেয়, যা ২০১৭ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, এটি আসলে দক্ষতা যাচাই নয়, বরং একটি ‘পুনর্নিয়োগ পরীক্ষা’ যা পূর্ববর্তী বোর্ডের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

২৭ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত পরীক্ষায় প্রায় ৯৫ শতাংশ কর্মকর্তা অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। এর পরপরই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে বরখাস্তপত্র পাঠাতে শুরু করে।

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে নীরব মানববন্ধন শুরু করেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা।
তাদের অভিযোগ, বরখাস্তের পাশাপাশি তাদের বেতন ও সঞ্চয় হিসাবও ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।

তারা এখন সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ ও আলোচনার উদ্যোগ কামনা করছেন। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।