বাড়ছে ‘সুপারবাগ’, প্রাণঘাতী হতে পারে সাধারণ সংক্রমণও

অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা ‘সুপারবাগ’-এর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতি ছয়টি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের মধ্যে একটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি অ্যান্টিবায়োটিকের দায়িত্বশীল ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে।

২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য সংস্থাটি দেখেছে যে, প্রায় ৪০ শতাংশ সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। প্রতিবেদনে অ্যাকিনেটোব্যাকটার এসপিপি, এশেরিকিয়া কোলাই, ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া, নেইসেরিয়া গনোরিয়া, নন-টাইফয়েডাল সালমোনেলা এসপিপি, শিগেলা এসপিপি, স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস এবং স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়ার মতো আটটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বিপজ্জনক সংক্রমণ ঘটে ওষুধ-প্রতিরোধী গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার কারণে, বিশেষ করে ই. কোলাই এবং কে. নিউমোনিয়া, যা সেপসিস, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়া এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক মূলত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল নামক ওষুধের একটি বৃহত্তর গোষ্ঠীর অংশ, যার মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিপ্যারাসাইটিকও রয়েছে। যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবী এসব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধে আর সাড়া দেয় না, তখন তাকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বলা হয়, যা গুরুতর অসুস্থতা, অক্ষমতা বা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ক্ষমতা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা বিশ্বজুড়ে পরিবারগুলোর স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের অবশ্যই দায়িত্বের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রত্যেকে সঠিক ওষুধ, মানসম্মত রোগনির্ণয় ব্যবস্থা এবং টিকা পায়।

গ্লোবাল রিসার্চ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (গ্রাম) প্রকল্পের একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি বছর দশ লাখের বেশি মৃত্যু সরাসরি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবাণুর পরিবর্তনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই এএমআর ঘটতে পারে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের ‘অপব্যবহার এবং অতিরিক্ত ব্যবহার’-এর ফলেও এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।

ফক্স নিউজের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা বিশ্লেষক ড. মার্ক সিগেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটিকে ‘বিশেষভাবে উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, এগুলো এমন আক্রমণাত্মক ব্যাকটেরিয়া, যার চিকিৎসা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। কার্বাপেনেম প্রতিরোধ, বিশেষ করে, চিকিৎসা করা খুব কঠিন, যেমনটা মাল্টিড্রাগ-প্রতিরোধী যক্ষ্মার ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

সিডিসির তথ্যমতে, কার্বাপেনেমকে ‘শেষ সারির অ্যান্টিবায়োটিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা গুরুতর মাল্টিড্রাগ-প্রতিরোধী সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সিগেল মনে করেন, সাধারণ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং হাসপাতালের সরঞ্জামে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এর অন্যতম প্রধান কারণ। তিনি আরও যোগ করেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা খুব লাভজনক নয়, কারণ এগুলো কেবল সংক্রমণের সময় ব্যবহৃত হয়, প্রতিদিন নয়। তাই আমাদের কয়েক দশক পুরোনো অ্যান্টিবায়োটিকের ওপরই নির্ভর করতে হয়।

সিগেলের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এই সংকটের একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে। তিনি বলেন, মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে এআই আরও দ্রুত এবং কম খরচে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করতে পারে। এই সমস্যা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের গ্লোবাল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অ্যান্ড ইউজ সার্ভিলেন্স সিস্টেমের (গ্লাস) মাধ্যমে এএমআর এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহারের ওপর আরও বেশি নজরদারির আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি ২০৩০ সালের মধ্যে সব দেশকে ‘গ্লাস’-এর কাছে এএমআর এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহার সম্পর্কিত উচ্চমানের তথ্য জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সূত্র: ফক্স নিউজ