জুলাই সনদ নিয়ে এনসিপির যত আপত্তি

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সনদের বাস্তবায়নের পথচিত্র অস্পষ্ট, সরকারের আচরণ ‘দায়সারা’ এবং জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারদের অবমাননার অভিযোগে দলটি সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান থেকে বিরত থেকেছে। এনসিপির নেতারা বলছেন, অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান না হলে তারা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানান, জুলাই সনদের বেশ কয়েকটি দিক নিয়ে স্বাক্ষরের আগেই তারা সরকারের কাছ থেকে নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু সনদ ‘বাস্তবায়নের পথটাই অনুল্লেখিত থেকে যাওয়ায় এবং সেখানে ধোঁয়াশা থাকায়’ তারা স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সমস্ত অর্জন বিফলে যাবে, এ কারণেই আমরা আজকের সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান থেকে বিরত থেকেছি।”

এনসিপির দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত সময়ের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের পথ খোলাসা করা, বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর সমাধান, আদেশের একটি পরিষ্কার খসড়া এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ২০২৬ সালকে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করা। আখতার হোসেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে বা গাফিলতি দেখা গেলে তারা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবেন।

একই সুর শোনা গেছে দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের কণ্ঠেও। পঞ্চগড়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে ‘নামমাত্র’ এবং সরকারের আচরণকে ‘দায়সারা’ বলে অভিহিত করেন। তার মতে, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেবল একটি নামমাত্র ঐকমত্য দেখিয়ে জনগণের বাস্তব দাবি ও আন্দোলনের প্রতিফলনকে উপেক্ষা করছে।

সারজিস আলম অভিযোগ করেন, সরকার সংস্কার বা আইনি ভিত্তির চেয়ে নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ প্রস্থান নিয়েই বেশি চিন্তিত। তিনি বলেন, “নামমাত্র স্বাক্ষর করেই নির্বাচনমুখী হতে চায় তারা।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, গণভোটে সনদের পক্ষে রায় এলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা আপত্তির বিষয়গুলোর কী হবে, তা পরিষ্কার করা হয়নি।

সারজিস আলম আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তারা অনেক ছাড় দিয়েছেন, কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্র একটি ‘লিখিত কাগজ’ হয়েই আছে, যার কোনো কার্যকারিতা দেখা যায়নি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সনদের ক্ষেত্রেও এমনটি হলে কিছুদিন পর অভ্যুত্থানটাই থাকবে না এবং যোদ্ধাদের নামেই মামলা দিয়ে আইনের আওতায় আনা হতে পারে।

এছাড়া, সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের দিন সংসদ ভবনের সামনে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান সারজিস আলম। তিনি বলেন, স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি ছিল ‘রাজনৈতিক দলের চুক্তির মিলনমেলা’, যেখানে শহীদ পরিবার বা যোদ্ধাদের জন্য কোনো মর্যাদার আসন ছিল না। তার মতে, এই আচরণ জুলাই যোদ্ধাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য এবং এর দায় সরকারকে নিতে হবে।