পলাতকদের ভোটাধিকার ও ইভিএম বাতিল; ফিরছে ‘না ভোট’

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বড় ধরনের সংস্কার এনেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী অধ্যাদেশ’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

নতুন এই সংশোধনীতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পলাতক ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ভোট দেওয়া বা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পুরোপুরি বাতিল, সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা, এবং ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান কেবল ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এছাড়া দলীয় জোটে থাকলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে বলে নতুন বিধান রাখা হয়েছে।

পররাষ্ট্র একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও জবাবদিহিমূলক করা।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ইভিএম সম্পর্কিত সব ধারা বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে সব নির্বাচন ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর’ সংজ্ঞায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে, যাতে নির্বাচনের সময় তাদের ভূমিকা স্পষ্ট হয়।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের স্থানীয় পর্যায়ে কর্মকর্তার নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের এখন থেকে দেশি ও বিদেশি সব সম্পদ ও আয়ের উৎস হলফনামার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। এই তথ্য নাগরিকদের দেখার জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ভোটারদের ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে ‘না ভোট’ অপশন পুনরায় চালু করা হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, আগে কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলে ভোটারদের বিকল্প ছিল না। এখন তারা চাইলে প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ‘না ভোট’ দেন, তাহলে সেই আসনে পুনঃভোট হবে।

রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান নিলে তা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নিতে হবে এবং আয়কর রিটার্নে তা উল্লেখ করতে হবে।

প্রবাসী ভোটার এবং নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এছাড়া ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমের উপস্থিতি ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।

নতুন আইনে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা কোনো আসনে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়লে পুরো আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারে- শুধু একটি কেন্দ্র নয়।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমরা চাই নাগরিকরা নির্বাচনের প্রতি আস্থা ফিরে পাক। এই পরিবর্তনগুলো একটি গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ নির্বাচনী সংস্কৃতি গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।