ডিসেম্বর থেকে অকেজো হবে অবৈধ মোবাইল, আসছে নতুন ব্যবস্থা

বাংলাদেশে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধমূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে দেশে ব্যবহৃত প্রতিটি মোবাইল ফোন নিবন্ধনের আওতায় আসবে, যা মোবাইল কেন্দ্রিক জালিয়াতি ও চুরি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

এনইআইআর হলো একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা, যা প্রতিটি মোবাইলের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইএমইআই নম্বরের সঙ্গে ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং তার ব্যবহৃত সিমকে সংযুক্ত করবে। এই সমন্বিত তথ্যভান্ডারের মাধ্যমে বৈধ ও অবৈধ হ্যান্ডসেট সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ফলে নকল বা অবৈধভাবে আমদানি করা কোনো মোবাইল ফোন দেশের নেটওয়ার্কে সচল করা যাবে না।

সরকারের এই উদ্যোগের পেছনে ডিজিটাল জালিয়াতি বৃদ্ধি একটি বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনা ঘটে অবৈধ বা অনিবন্ধিত ডিভাইসের মাধ্যমে। এছাড়া, বিটিআরসি ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ই-কেওয়াইসি সংক্রান্ত ৮৫ শতাংশ জালিয়াতিই হয়েছে অনিবন্ধিত বা পুনঃপ্রোগ্রাম করা হ্যান্ডসেট দিয়ে। এনইআইআর চালু হলে এই ধরনের ডিভাইসগুলো নেটওয়ার্কে অকার্যকর হয়ে পড়বে।

এই ব্যবস্থা চালুর ফলে বড় ধরনের রাজস্ব ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা পাবে দেশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব অনুযায়ী, অবৈধ ফোন আমদানির কারণে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায়। এনইআইআর কার্যকর হলে এই ক্ষতি রোধের পাশাপাশি দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্পও সুরক্ষিত হবে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘এনইআইআর শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নয়, এটি নাগরিকের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা এবং টেলিযোগাযোগ খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি জাতীয় অঙ্গীকার’।

শুধু জালিয়াতি বা রাজস্ব ফাঁকিই নয়, ফোন চুরি সংক্রান্ত অপরাধ দমনেও এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। বিটিআরসির তথ্যমতে, ২০২৩ সালে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার ফোন চুরির অভিযোগ জমা পড়েছিল। এনইআইআর চালু হলে চুরি হওয়া ডিভাইসগুলো সহজেই শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক করে দেওয়া যাবে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানান, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে মোবাইলে ব্যবহৃত সিমের তথ্যও পাওয়া যাবে, যা প্রয়োজনে মোবাইলটি ট্রেস করতে সহায়তা করবে। সংবাদ সম্মেলনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর এবং মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।