পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত সেন্ট মার্টিন, নভেম্বরে চলবে না পর্যটকবাহী জাহাজ

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে আজ (১ নভেম্বর) থেকে পুনরায় পর্যটক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে নভেম্বর মাসে দ্বীপে রাতযাপন নিষিদ্ধ থাকায় পর্যটকবাহী জাহাজগুলো ডিসেম্বরের আগে চলাচল করবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

গত বছরের মতো এবারও সরকার নির্ধারিত নির্দেশনা অনুযায়ী নভেম্বর মাসে পর্যটকদের সকালে গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে কক্সবাজার ফিরে আসতে হবে। ফলে দীর্ঘ সমুদ্রপথের ঝামেলা ও রাত না কাটানোর শর্তে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।

বাংলাদেশ সি ক্রুজ অপারেটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন ইসলাম বলেন, আমরা কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে চলাচলের অনুমতি পেয়েছি, কিন্তু নভেম্বরে কোনো পর্যটক আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই এ মাসে জাহাজ চলবে না। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আমরা প্রস্তুত আছি।

তিনি আরও বলেন, গত মৌসুমে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক দ্বীপটি ভ্রমণ করেছিলেন।

সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস সেন্ট মার্টিনে পর্যটন কার্যক্রম চালু থাকবে। এর বাইরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী নয় মাস দ্বীপে পর্যটক প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেট অনুযায়ী, প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ হাজার পর্যটক দ্বীপে প্রবেশ করতে পারবেন; নভেম্বর মাসে কেবল দিনভিত্তিক সফর, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে রাতযাপনের অনুমতি থাকবে; বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েবসাইটে অনলাইনে টিকিট ক্রয় করতে হবে এবং প্রতিটি টিকিটে কিউআর কোড থাকতে হবে।

দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জারি করা ১২টি বিশেষ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- সৈকতে রাতে আগুন জ্বালানো, উচ্চস্বরে গান বাজানো বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ; কেওড়া বনে প্রবেশ, ফল সংগ্রহ বা বন্যপ্রাণী ক্ষতি করা যাবে না; সাগর কচ্ছপ, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া বা শামুক-ঝিনুক ধরা বা বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ; সৈকতে মোটরসাইকেল, সিবাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন নিষিদ্ধ; পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী বহন করা যাবে না, যেমন- চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, ছোট সাবান ও শ্যাম্পুর স্যাশে, প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি এবং পর্যটকদের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির ফ্লাস্ক বহনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমরা কঠোরভাবে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করব। নিরাপত্তার কারণে এখন থেকে জাহাজ টেকনাফ নয়, কক্সবাজার শহর থেকে ছাড়বে।

তবে দ্বীপের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বলছেন, নভেম্বর মাসে রাতযাপন নিষিদ্ধ থাকায় স্থানীয় অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
সেন্ট মার্টিন দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি নূর মোহাম্মদ বলেন, দুই বছর আগেও পাঁচ মাস পর্যটকরা রাত কাটাতে পারতেন। এখন সে সুযোগ না থাকায় দোকানে কোনো কেনাবেচা নেই। প্রায় ৬০–৭০টি দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।

সেন্ট মার্টিন হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, আমরা সরকারের পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু উন্নত পর্যটন মানে বিনিয়োগকারীদের বেকার রেখে দেওয়া নয়। দ্বীপবাসীর জীবিকা রক্ষায় অন্তত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাতযাপনের অনুমতি দেওয়া উচিত।