ইতিহাসে প্রথমবার হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে হোয়াইট হাউস পরিদর্শন করবেন, যা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘নতুন অধ্যায়’ উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শায়বানি রবিবার বাহরাইনে দেওয়া এক ভাষণে এই ঐতিহাসিক সফরের কথা জানান।

আসাদ আল-শায়বানি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা নভেম্বরের শুরুতে হোয়াইট হাউসে যাবেন।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘অবশ্যই এটি একটি ঐতিহাসিক সফর। ৮০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউস সফর করছেন।’ এদিকে, মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাক, যিনি তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বেও রয়েছেন, অ্যাক্সিওসকে জানিয়েছেন যে সফরটি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে, অর্থাৎ ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই সফরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সিরিয়ার পুনর্গঠনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সিরীয় প্রতিনিধিদল হোয়াইট হাউসের সঙ্গে আইএস (দায়েশ) বিরোধী প্রচেষ্টা নিয়েও কথা বলবে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এটি শুধু ‘সিরিয়ার একার দায়িত্ব নয়’, বরং ‘একটি আন্তর্জাতিক হুমকি যা কেবল সিরীয় সরকারের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সিরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘নতুন অধ্যায়’ শুরু করতে এবং ‘সুসম্পর্ক’ স্থাপন করতে আগ্রহী। ইসরায়েলি হামলা প্রসঙ্গে শায়বানি উল্লেখ করেন, তেল আবিবের সম্প্রসারণবাদী নীতির অধীনে গত ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে ১,০০০-এর বেশি সীমান্ত পারাপারের ঘটনা ঘটেছে, যা ‘কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার দক্ষিণ প্রদেশগুলোতে বেশ কয়েকবার সীমান্ত অতিক্রম করে অভিযান চালিয়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর, ইসরায়েল সিরিয়ার গোলান মালভূমিতে অসামরিক বাফার জোন দখল করে তাদের দখলদারি সম্প্রসারিত করে, যা সিরিয়ার সঙ্গে ১৯৭৪ সালের বিচ্ছেদ চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

শায়বানি ১৯৭৪ সালের বিচ্ছেদ চুক্তির প্রতি সিরিয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে দামেস্ক ‘নতুন কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না সিরিয়া মেরুকরণের কেন্দ্রে পরিণত হোক, বরং এটি সবার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ পথ হয়ে উঠুক, যা সহযোগিতা ও উন্মুক্ততার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলবে।’

এই শীর্ষ কূটনীতিক প্রতিবেশী দেশ এবং অঞ্চলের মিত্রদের সিরিয়ার পুনর্গঠনে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এটি কেবল আমাদের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতেই প্রতিফলিত হবে না, বরং সমগ্র অঞ্চলের জন্য শান্তি ও সুবিধা বয়ে আনবে।’ উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের শেষের দিকে আসাদের রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর সিরিয়া বিনিয়োগকারী আকর্ষণ এবং আঞ্চলিক রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কাজ করছে। আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে ১৯৬৩ সাল থেকে চলে আসা বাথ পার্টির কয়েক দশকের শাসনের অবসান ঘটে।