রেমিট্যান্স ও রিজার্ভে জোড়া স্বস্তি, অক্টোবরে এলো ২৫৬ কোটি ডলার

প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারায় দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরেছে, যার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। চলতি বছরের অক্টোবরে প্রবাসীরা ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ (২.৫৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রবিবার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) দেশে মোট ১ হাজার ১৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৯০ কোটি ডলার। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ১২৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ, আগস্টে ২৪২ কোটি ২০ লাখ এবং সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এর আগে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল এবং পুরো অর্থবছরে মোট আয় ছিল ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ২৬.৮ শতাংশ বেশি ছিল।

রেমিট্যান্সের এই শক্তিশালী প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের মোট রিজার্ভ ৩২.১৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২৭.৫৪ বিলিয়ন ডলার এবং নিট রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর, দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫.৪৪ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ১৯.৮৭ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে, গত এক বছরে গ্রস রিজার্ভ প্রায় ৭ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ রিজার্ভ প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দেশে ডলারের বাজার এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। খোলা বাজারে হুন্ডির প্রভাব কমে যাওয়ায় এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের ভালো দাম পাওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং গত এক বছর ধরে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার আসছে।

বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ বাড়ছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে এখন আর আগের মতো ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে না, বরং বাজার থেকে ডলার কিনছে। প্রসঙ্গত, একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকতে হয়, যে মানদণ্ডের কাছাকাছি বাংলাদেশ এখন অবস্থান করছে।