প্রার্থী চূড়ান্ত, ধানের শীষকে জেতাতে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের ডাক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শিগগিরই মনোনীতদের নাম ঘোষণার কথা জানিয়ে তিনি দলের চূড়ান্ত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। রবিবার সন্ধ্যায় গুলশানের হোটেল লেকশোরে প্রবাসী নেতাকর্মীদের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ দেওয়ার জন্য অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই কথা বলেন।

তারেক রহমান জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত জানানোর পর বিএনপি সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘জনসমর্থিত দল হওয়ায় প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকাটা স্বাভাবিক এবং গৌরবের। তবে সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়।'

তিনি আরও বলেন, ‘শিগগিরই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপি মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের নাম আমরা জানিয়ে দেবো। দল যাকে যে আসনে নমিনেশন দেবে, তাকে বিজয়ী করতে জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।'

নেতাকর্মীদের নিজেদের মধ্যে বিবাদ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে রয়েছে’। তারেক রহমান জিয়াউর রহমানের উক্তি ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত হিসেবে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সঙ্গী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেবে। এ কারণে কিছু আসনে দলীয় নেতারা মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন, যা দেশ ও গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে মেনে নেওয়ার জন্য তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করেন।

একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথে হেঁটেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্যনতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সঙ্ঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।’ তবে তিনি বিশ্বাস করেন, নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে তারেক রহমান প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানান। তিনিপ্রতিশ্রুতি দেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এছাড়া, দেশের নারী নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। একটি পত্রিকার প্রতিবেদনের তথ্য দিয়ে তিনি জানান, গত আগস্ট মাসে সারা দেশে ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে এবং মোট ৮৯ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, নারী ও শিশুর জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ সভ্য হতে পারে না। এ বিষয়ে সামাজিক উদ্যোগ গড়ে তোলার পাশাপাশি রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান যুগ সাইবার যুদ্ধের যুগ। তিনি বলেন, ‘আপনি কয়টা জনসভা করলেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কত সংখ্যক মানুষের কাছে আপনি ডিজিটালি পৌঁছাতে পারলেন’। এই ক্ষেত্রে বিএনপি কিছুটা পিছিয়ে আছে স্বীকার করে তিনি দলের সব স্তরের নেতাদের প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাতের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য নেতারা।