গাজা থেকে সুদান: অস্থিরতা নিরসনে একযোগে কাজ করবে মিশর ও রাশিয়া

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং সুদানে ‘সমান্তরাল শক্তি’ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। এক ফোনালাপে তারা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

শনিবার মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফোনালাপে আবদেলাত্তি গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে শক্তিশালী করতে এবং এর বিধানগুলো সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে মিশরের চলমান প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি টেকসই শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক, উন্নয়নমূলক এবং মানবিক দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। উল্লেখ্য, গাজায় দুই বছরের ইসরায়েলি যুদ্ধের পর তুরস্ক, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে গত ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরুর জন্য ইসরায়েল সব জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তরের শর্ত দিয়েছে। তবে হামাস জানিয়েছে, গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। এদিকে, মিশরের শীর্ষ কূটনীতিক গাজার পুনর্গঠনের জন্য কায়রোতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে ভূখণ্ডটি পুনর্নির্মাণ এবং মানবিক দুর্ভোগ কমাতে বিশ্বব্যাপী সমর্থন জোগাড়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। আরব লিগ এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) অনুমোদিত ৫৩ বিলিয়ন ডলারের একটি পাঁচ বছর মেয়াদি পুনর্গঠন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিশর কাজ করছে, যেখানে জাতিসংঘের হিসাবে গাজার পুনরুদ্ধারে ৭০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৬৯ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি।

সুদান প্রসঙ্গে উভয় মন্ত্রী সুদানের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা এবং যেকোনো ধরনের সমান্তরাল শক্তির উত্থান প্রত্যাখ্যান করার ওপর জোর দেন। আবদেলাত্তি একটি ব্যাপক মানবিক যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য নিরাপদ করিডোর খোলার লক্ষ্যে সমন্বিত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানান। তিনি উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশেরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর চালানো গুরুতর সহিংসতার নিন্দা এবং সেখানকার ক্রমাবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ অক্টোবর আরএসএফ এল-ফাশেরের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালায়। এই হামলার ফলে দেশটিতে ভৌগোলিক বিভাজন আরও গভীর হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আরএসএফ জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মিশর—এই চারটি দেশের জোটের প্রস্তাবে সুদানে একটি মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি এবং এ বিষয়ে ওই চারটি দেশ বা সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে এই যুদ্ধ চলছে, যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায়ও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।