টাঙ্গুয়ার-হাকালুকি হাওর রক্ষায় কঠোর নির্দেশনা, হাউসবোটে পার্টি নিষিদ্ধ

দেশের দুটি অন্যতম সংবেদনশীল জলজ বাস্তুতন্ত্র টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় কঠোর আদেশ জারি করেছে সরকার। এই আদেশের আওতায় হাওর দুটিতে চলাচলকারী কোনো হাউসবোট বা নৌযানে উচ্চ শব্দে গান বাজানো এবং যেকোনো ধরনের পার্টি আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সোমবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ পানি আইনের ক্ষমতাবলে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই ‘টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ’ জারি করা হয়েছে।

পর্যটকদের জন্য দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হাউসবোট বা যেকোনো নৌযানে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। ট্যুর অপারেটরদের ১০০ ফুটের বেশি দীর্ঘ নৌযান বা হাউসবোট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে না। এছাড়া, নৌযানগুলোকে নির্ধারিত রুটের বাইরে চলাচল ও নোঙর করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আকস্মিক ঝড় বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পর্যটক পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।

পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাওর অঞ্চলের পাখি, বিশেষ করে পরিযায়ী পাখি শিকার করা যাবে না। জলজ বন যেমন—হিজল, করচ ইত্যাদির কোনো ক্ষতিসাধন বা ডালপালা কাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে বা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকার এবং শুষ্ক মৌসুমে জলাধারের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে ফেলা যাবে না।

এই সুরক্ষা আদেশে হাওরের ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষায়ও জোর দেওয়া হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া হাওরের ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন বা জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। একই সঙ্গে, হাওর থেকে অবৈধভাবে বালু, পাথর বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাওর অঞ্চলে পাকা সড়ক নির্মাণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং জরুরি প্রয়োজনে নির্মাণ করতে হলে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, হাওর এলাকার বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের তরল ও কঠিন বর্জ্য হাওরে ফেলা যাবে না। এই সুরক্ষা আদেশ অমান্য করাকে বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।