দ্বিমেরুর বিশ্বে তুরস্কের ‘সেতু’ হওয়ার সুযোগ

বিভক্ত বিশ্বে তুরস্কের একটি সংযোগকারী সেতু হিসেবে কাজ করা উচিত এবং অর্থনীতিকে আরও বিকাশের জন্য সম্ভাব্য সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত। রুশ-তুর্কি ব্যবসায়ী সমিতির (আরটিআইবি) সভাপতি এরদেম আকাই আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন।

ইস্তাম্বুলে ভেরোনা ইউরেশিয়া অর্থনৈতিক ফোরামের এক ফাঁকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তুরস্ক ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টরা দুই দেশের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। আকাই বলেন, ‘(রাশিয়ার ওপর) নিষেধাজ্ঞা এবং নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ প্রকৃতপক্ষে তুর্কি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু খাতে রুশ এবং তুর্কিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যদিও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, নতুন সুবিধা এবং সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, তুর্কি ব্যবসায়িক বিশ্বকে যৌথ বিনিয়োগ এবং যৌথ উদ্যোগে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে হবে।’

তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা সম্ভব। এর মাধ্যমে তুর্কি ব্যবসায়ীরা শুধু রাশিয়া নয়, বরং অন্যান্য অঞ্চলেও নিজেদের সম্ভাবনা ও গতিকে এগিয়ে নিতে পারবে।

আকাই বলেন, ‘তুর্কি ব্যবসায়ী বিশ্বকে আরও বেশি উদ্যমী হতে হবে। খাদ্য, বস্ত্র এবং স্বাস্থ্যের মতো অনেক খাত নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই, কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান দ্বিধায় ভোগে এবং এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার।’

সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন, সোভিয়েত-পরবর্তী যুগে বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আধিপত্যের অধীনে ছিল, কিন্তু ব্রিকস গঠনের পর বাণিজ্যক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়া উদীয়মান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশই আসে চীন থেকে। বিশ্ব এখন থেকে দুটি মেরুতে বিভক্ত হয়ে পরিচালিত হতে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে কিছু সমস্যা রয়েছে, কিন্তু অন্যদিকে ভারসাম্য রক্ষার জন্য চীনের পাশাপাশি রাশিয়া, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশগুলো রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ব আরও অংশগ্রহণমূলক দ্বিমেরু ব্যবস্থায় প্রবেশ করবে এবং তুরস্ক এই দুই মেরুর মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে—একটি সেতু হিসেবে আমরা কী অর্জন করতে পারি, তা আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে।’

আকাই জোর দিয়ে বলেন, প্রকৃত উৎপাদনই অর্থনীতির মূল ভিত্তি এবং অর্থনীতির অন্যান্য উপাদানগুলো এর ওপরই গড়ে ওঠে। তিনি তুরস্ক ও রাশিয়াকে প্রকৃত উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সফটওয়্যার, পরিষেবা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), অটোমেশন এবং আরও অনেক কিছু তৈরির জন্য আপনার একটি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন—সেই প্ল্যাটফর্ম থেকেই সহযোগিতা বাড়তে পারে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘তুরস্ক ও রাশিয়ার অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক—আমাদের মধ্যে সর্বদা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং আমি মনে করি প্রযুক্তিগত উৎপাদন এবং অন্যান্য উচ্চ-মূল্য সংযোজিত ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো দরকার।’