মার্কিন রাজনীতিতে মুসলিমদের ঐতিহাসিক উত্থান

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন জোহরান মামদানি। তবে গত সপ্তাহের নির্বাচনে তিনিই একমাত্র বিজয়ী মুসলিম নন; যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মুসলিম আমেরিকানরা এবার রেকর্ডসংখ্যক পদে জয়ী হয়েছেন, যা দেশটির রাজনীতিতে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) জানিয়েছে, মামদানিসহ মোট ছয়জন মুসলিম এবারের নির্বাচনে নিজ নিজ শহরের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন বা হতে চলেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন মিশিগানের ডিয়ারবর্নের প্রধান নির্বাহী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত আবদুল্লাহ হামুদ এবং পার্শ্ববর্তী ডিয়ারবর্ন হাইটসের মেয়র হিসেবে পূর্ণ মেয়াদে নির্বাচিত মো বেইদুন। ডিয়ারবর্ন শহরটি আরব আমেরিকানদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। মেয়র বিল বাজির পদত্যাগের পর বেইদুন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাজি বর্তমানে তিউনিসিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।

বেইদুন তার নির্বাচনী প্রচারে শহরের বাসিন্দাদের জন্য সেবার মান উন্নয়ন ও জননিরাপত্তার মতো মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছিলেন, যার ফলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলওম্যান ডেনিস মালিনোস্কি-ম্যাক্সওয়েলকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। অন্যদিকে, মামদানির মতোই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নাগরিক সেবার মান উন্নয়নের মতো প্রগতিশীল এজেন্ডা নিয়ে প্রচার চালিয়ে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল্লাহ হামুদ।

মিশিগানের আরেকটি শহর হ্যামট্রামকের নির্বাচনের ফলাফল এখনো চূড়ান্ত হয়নি, যেখানে দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান মাত্র ১১। তবে দুই প্রার্থী—আদম আলহারবি ও মুহিত মাহমুদ—মুসলিম হওয়ায় শহরটির সর্বোচ্চ পদ একজন মুসলিমই পাচ্ছেন, তা নিশ্চিত। এছাড়া, মেরিল্যান্ডের কলেজ পার্কের মেয়র হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন ফয়জুল কবির। তিনি ২০২৩ সালে একটি বিশেষ নির্বাচনে জয়ী হয়ে মেরিল্যান্ডের প্রথম মুসলিম মেয়র হয়েছিলেন।

নির্বাচনে জয়ের পর এক ব্লগ পোস্টে কবির তার মেয়াদের কাজগুলো চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি লেখেন, ‘আমরা আমাদের এলাকাকে আরও নিরাপদ, হাঁটার উপযোগী এবং সংযুক্ত করেছি, পাশাপাশি কলেজ পার্কের অনন্য বৈচিত্র্যকে উদযাপন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জননিরাপত্তা, সব প্রজন্মের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন এবং পরিবার, যুবক ও প্রবীণদের জন্য সহায়ক পরিষেবাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত রাখব।’ নিউ জার্সির ইস্ট অরেঞ্জ শহরে টেড গ্রিনও পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন এবং তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন।

কেয়ার আরও জানিয়েছে, আরও তিনটি নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যেগুলোর ফলাফল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মুসলিমদের এই অ্যাডভোকেসি গোষ্ঠীর জরিপে দেখা গেছে, মুসলিম আমেরিকানদের মধ্যে জোহরান মামদানির প্রতি ৯৭ শতাংশ এবং গাজালা হাশমির প্রতি ৯৫ শতাংশ সমর্থন রয়েছে।

মেয়র পদের বাইরেও মুসলিম আমেরিকানরা রাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন গাজালা হাশমি, যিনি ভার্জিনিয়ায় লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হতে চলেছেন এবং জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনিই হবেন রাজ্যব্যাপী পদে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম নারী। কেয়ারের তথ্য অনুসারে, ৭৬ জন মুসলিম প্রার্থীর মধ্যে ৩৮ জন বিচারক, কাউন্টি ও সিটি আইনসভার সদস্য এবং স্কুল বোর্ডের মতো বিভিন্ন পদে জয়ী হয়েছেন, যা মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্বের একটি রেকর্ড।

এই ফলাফল প্রসঙ্গে কেয়ার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই এক্সিট পোলের ফলাফল একটি উৎসাহব্যঞ্জক সত্যকে তুলে ধরেছে: আমেরিকান মুসলিমরা এগিয়ে আসছে, নিজেদের কথা বলছে এবং আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাবের মুখে তারা নিজেদের এবং প্রতিবেশীদের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে এগিয়ে আসছে, যা প্রমাণ করে যে কুসংস্কার নয়, অংশগ্রহণই আমাদের জাতির শক্তিকে সংজ্ঞায়িত করে।’