যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে চীনের নতুন চাল ‘কে-ভিসা’

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে অনিশ্চয়তার মধ্যে বিদেশি প্রযুক্তি পেশাজীবীদের আকৃষ্ট করতে ‘কে-ভিসা’ নামে নতুন একটি কর্মসূচি চালু করেছে চীন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর ও রোবটিকসের মতো উন্নত শিল্পে নিজেদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষ কর্মীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে বেইজিং। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে এইচ-১বি ভিসার আবেদনকারীদের জন্য ফি বাড়িয়ে ১ লাখ ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। চীনা সরকার এই পরিস্থিতিকে বিদেশি পেশাজীবী ও বিনিয়োগের জন্য নিজেদের একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ হিসেবে দেখছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা এক ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী বৈষ্ণবী শ্রীনিবাসগোপালন নতুন এই কর্মসূচিতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, ‘কে-ভিসা একটি ভালো বিকল্প।’ চীনের বিদ্যমান ‘আর-ভিসা’ কর্মসূচির মতো নতুন এই ভিসার জন্য আগে থেকে চাকরির প্রস্তাব থাকার প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দক্ষ কর্মীদের মধ্যে এই ভিসা নিয়ে আগ্রহ দেখা গেছে। ইন্টেলের চিপ আর্কিটেক্ট ফেই সু এবং আলটেয়ারের প্রকৌশলী মিং ঝউয়ের মতো কয়েকজন চীনা-মার্কিন নাগরিকসহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রকৌশল বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে চলেও এসেছেন।

চীন দীর্ঘদিন ধরে চলা দক্ষতার ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করলেও দেশের ভেতরেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। দেশটিতে স্নাতক শেষ করা তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বাদে ১৬-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ১৮ শতাংশ। স্থানীয় সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই কর্মসূচি ‘স্থানীয় চাকরির সুযোগের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।’

তবে সাংহাই অবজারভারসহ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের মতে, বিদেশি পেশাজীবীরা ‘শেষ পর্যন্ত অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে এবং দক্ষতার ঘাটতি ও অসামঞ্জস্যতা পূরণ করবে।’

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, কিছু কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা কে-ভিসার আবেদনকে সীমিত করতে পারে। বিদেশি কর্মীদের চীনে ভাষা এবং ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’ নামে পরিচিত ইন্টারনেট সেন্সরশিপের মতো সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। অন্যদিকে, গবেষণায় নেতৃত্ব, ইংরেজির ব্যাপক ব্যবহার এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার সহজ পথের মতো বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো অনেক এগিয়ে আছে। বিশ্লেষকদের মতে, এইচ-১বি ভিসার সম্ভাব্য আবেদনকারীদের চীনের পরিবর্তে যুক্তরাজ্য বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো পশ্চিমা দেশগুলোতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

একজন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, ‘বিশ্বের সেরা মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চীনকে সুবিধাজনক ভিসার চেয়েও আরও অনেক বেশি কিছু করতে হবে।’ মূলত, পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অভ্যন্তরীণ চাপ ও কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বৈশ্বিক প্রতিভার অনিশ্চয়তাকে পুঁজি করে কৌশলগতভাবে আগানোর চেষ্টা করছে বেইজিং।