জামায়াত নেতা: এক দলের হয়ে কাজ করছেন তিন উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের স্বার্থে কাজ করছেন বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, এই তিন উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টাকে ভুল তথ্য দিয়ে এবং নানাভাবে প্ররোচিত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথ রুদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতের এই নেতা অবিলম্বে অভিযুক্ত তিন উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবি জানান। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের নাম পাঠানো হবে। এরপরেও যদি ষড়যন্ত্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে তাদের নাম প্রকাশ্যে আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’

সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের অভিযোগ করেন, সরকার একটি দলের ফাঁদে পা দিয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত সংস্কার প্রক্রিয়াকে গুরুত্বহীন করে ফেলবে। তার মতে, মানুষ জাতীয় নির্বাচনে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় গণভোটে ভোট কম পড়তে পারে। আর তখন সংস্কারবিরোধীরা প্রচার করবে যে, জনগণ গণভোট চায়নি।

তিনি আরও দাবি করেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ব্যাপক কাটছাঁট করে সরকার জনগণের সঙ্গে আপস করেছে, যা দেশবাসীকে হতাশ করেছে। তার অভিযোগ, সংস্কার প্রস্তাবের প্যাকেজকে চার ভাগে বিভক্ত করে সরকার জনগণকে জটিলতার মধ্যে ফেলেছে এবং বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্টকে’ সুবিধা দিতেই এমনটি করা হয়েছে।

তবে প্রধান উপদেষ্টার একটি পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তাহের। তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার চেয়েছিল, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা আদেশের মাধ্যমে সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। এই দৃঢ়তার জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে সাধুবাদ জানান।

জামায়াতের নায়েবে আমির আরও অভিযোগ করেন, সরকার সবার জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে আন্তরিক নয়। তার দাবি, কয়েকজন উপদেষ্টার সহায়তায় একটি বিশেষ দল প্রশাসনকে নিজেদের কব্জায় নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং অনুগত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশের আল ফালাহ মিলনায়তনে আটটি সমমনা দলের পক্ষ থেকে এই যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফজলে বারী মাসউদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ এবং খেলাফত মজলিসের সাখাওয়াত হোসাইনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীসহ মোট আটটি দল পাঁচ দফা দাবিতে একযোগে আন্দোলন করছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে জুলাই মাসে জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি, নভেম্বরে গণভোট আয়োজন এবং নির্বাচনে সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। জোটের অন্য দলগুলো হলো— ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।