‘ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই, চাপে নতজানু হবে না ইসি’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোটের আয়োজনে ইসির দৃঢ় অবস্থানের প্রতিশ্রুতি এবং দলগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুপারিশ উঠে এসেছে। রোববার নির্বাচন ভবনে দিনব্যাপী সংলাপে ইসি জানিয়েছে, একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা কোনো চাপের কাছে ‘নতজানু হবে না’ এবং পেশিশক্তি, পক্ষপাত ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোসহ যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা একটা সুন্দর, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটা আমাদের জাতির কাছে অঙ্গীকার।’ তিনি স্পষ্ট করে জানান, কমিশন কারও পক্ষে কাজ করবে না এবং দেশের আইন ও বিধিবিধান মেনেই চলবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অপতথ্য ছড়ানোকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা নতজানু হব না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার করছি। আমাদের সামনে ভালো নির্বাচন করার বিকল্প রাস্তা নেই।’ তিনি দলগুলোকে পোলিং এজেন্ট নিয়োগের মতো বিষয়গুলোতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।

আরেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, যারা নির্বাচনে পেশিশক্তি প্রদর্শন করবে, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করবে এবং অপপ্রচার ছড়াবে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি অতীতের নির্বাচনী সংস্কৃতির দুর্বলতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের কালচারাল ডেমেজ হয়ে গেছে। এটিকে আমাদের আন-ডু করতে হবে।’ তিনি আরও জানান, প্রবাসী ভোটারদের জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ১৮ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে এবং এর গোপনীয়তা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

রোববার দ্বিতীয় দিনের সংলাপে সকালের পর্বে গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি অংশ নেয়। এ সময় দলগুলোর প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনকে কোনো অদৃশ্য শক্তির কাছে নতজানু না হয়ে একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, অতীতের কমিশনগুলোর কাছ থেকে জাতি নিরপেক্ষতা পায়নি, তবে বর্তমান কমিশনের ওপর তারা আস্থা রাখতে চান। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব জাফর আহমেদ জয় জোটবদ্ধ দলগুলোর নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ রাখায় ইসিকে ধন্যবাদ জানান এবং এই বিধিমালা বহাল রাখার দাবি করেন। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ সারাদেশে চার ধাপে ভোট আয়োজনের প্রস্তাব দেয় এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার রোধে পদক্ষেপ চায়।

একই দিনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে ১২ দফা সুপারিশ পেশ করে। তাদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে ইসির নিজস্ব জনবল নিয়োগ, প্রচারণার শুরু থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন, প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও কালো টাকার ব্যবহার রোধে স্বতন্ত্র গোয়েন্দা ইউনিট গঠন এবং প্রবাসীসহ ছুটির সুযোগ পান না এমন চাকরিজীবী এবং বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা করা।

সংলাপে কিছু বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও তৈরি হয়। ইসলামী ঐক্যজোটের দুটি পক্ষ সংলাপে অংশ নিতে এলে একটি পক্ষকে বের করে দেওয়া হয়, যা নিয়ে কিছুটা হট্টগোল সৃষ্টি হয়।