কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে চাকরি হারানোর শঙ্কায় অর্ধেকের বেশি ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক

যুক্তরাজ্যের প্রকাশিত ঔপন্যাসিকদের অর্ধেকেরও বেশি (৫১ শতাংশ) আশঙ্কা করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কথাসাহিত্যে তাদের কাজকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে পারে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নতুন জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে আরও দেখা গেছে, ঔপন্যাসিকদের একটি বড় অংশ এরই মধ্যে তাদের আয় কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে আয় আরও কমার আশঙ্কা করছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৫৯ শতাংশ ঔপন্যাসিক জানিয়েছেন, তাদের অনুমতি বা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাদের লেখা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে, ৩৯ শতাংশ লেখক জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে এরই মধ্যে তাদের আয় প্রভাবিত হয়েছে। প্রায় ৮৫ শতাংশ ঔপন্যাসিক মনে করেন, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে তাদের আয় আরও কমবে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইন্ডেরু সেন্টার ফর টেকনোলজি অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (এমসিটিডি) জন্য পরিচালিত এই নতুন গবেষণায় ২৫৮ জন প্রকাশিত ঔপন্যাসিক এবং ৭৪ জন সাহিত্যশিল্পের পেশাজীবীর (সম্পাদক ও সাহিত্য প্রতিনিধি সহ) ওপর জরিপ চালানো হয়। প্রতিবেদনের লেখক ক্লেমেন্টাইন কোলেট ব্রিটিশ কথাসাহিত্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ও দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যায়নের জন্য এই জরিপ পরিচালনা করেন।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, বিভিন্ন ঘরানার লেখকদের মধ্যে রোমান্স লেখকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ৬৬ শতাংশ উত্তরদাতা রোমান্স লেখকদের ‘চরম হুমকিতে’ থাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এরপরই রয়েছে থ্রিলার (৬১ শতাংশ) ও অপরাধধর্মী (৬০ শতাংশ) উপন্যাসের লেখকরা।

তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সামগ্রিক মনোভাব পুরোপুরি নেতিবাচক নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশই মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সামাজিক উপকারিতা রয়েছে। এমনকি ৩৩ শতাংশ ঔপন্যাসিক এরই মধ্যে তাদের লেখার কাজে এটি ব্যবহার করছেন, তবে মূলত তথ্য খোঁজার মতো অ-সৃজনশীল কাজে।

প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের প্রকাশনা খাতের গভীর উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এই খাতটি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বার্ষিক ১১ বিলিয়ন পাউন্ড অবদান রাখে এবং বই রপ্তানিতে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে। সাহিত্যিকরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব আইন উপেক্ষা করা হয়েছে। তারা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সম্মতি, ন্যায্য পারিশ্রমিক ও স্বচ্ছতার পাশাপাশি সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনের লেখক ক্লেমেন্টাইন কোলেট জানান, ঔপন্যাসিকরা ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন যে, বিপুল পরিমাণ কথাসাহিত্য থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা লেখার মূল্য কমিয়ে দিতে পারে এবং মানব লেখকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারে। তিনি আরও জানান, অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে ভবিষ্যতে জটিল ও দীর্ঘ উপন্যাসের চাহিদা কমে যেতে পারে। কোলেট বলেন, ‘উপন্যাস আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি এবং ব্যক্তির জীবনে কল্পনার চেয়েও বেশি অবদান রাখে। উপন্যাস সৃজনশীল শিল্পের একটি মূল অংশ এবং অগণিত চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও ভিডিও গেমের ভিত্তি।’