বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন তার চলতি বছরের সমস্ত মুনাফা হারিয়েছে। বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ এবং মূল্যস্ফীতির মতো বিষয়গুলো এখন ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতেও প্রভাব ফেলছে। বুধবার বিটকয়েনের দাম বছরের শুরুর দামের নিচে নেমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ছবি - সংগৃহীত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যাপক দরপতনের কারণ হলো ক্রিপ্টোকারেন্সির আচরণে একটি বড় পরিবর্তন। এটি এখন আর বাজারের ঝুঁকির বিপরীতে একটি নিরাপদ বিকল্প বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করছে না, বরং সামষ্টিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ইনস্টিটিউট ফর মানি, টেকনোলজি অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন’-এর পরিচালক বিল মুরার বলেন, ‘বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন আর বাজারের ঝুঁকির বিপরীতে সুরক্ষা হিসেবে কাজ করছে না, বরং এগুলো এখন বাজারের বাকি অংশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে তাল মিলিয়ে চলছে।’ তিনি আরও জানান, বাণিজ্যযুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি, ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সবক্ষেত্রেই ঝুঁকি কমাচ্ছেন, যা ক্রিপ্টোর বাজারকে আরও বেশি অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

ডিউক ইউনিভার্সিটির ফুকুয়া স্কুল অব বিজনেসের অর্থশাস্ত্রের অধ্যাপক ক্যাম্পবেল হার্ভে একই মত প্রকাশ করে বলেন, ‘যখন বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি এড়িয়ে চলেন, তখন তারা স্টক এবং বিটকয়েনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বিক্রি করে দেন। বর্তমানে ঠিক এটাই ঘটছে।’ তবে তিনি মনে করেন, মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে যে ক্রিপ্টো জগতে বিটকয়েন ছাড়াও আরও অনেক কিছু রয়েছে।

বিটকয়েনের উত্থান-পতন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ক্রিপ্টোর স্বর্গ’ বানানোর প্রতিশ্রুতিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার বছরের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। তবে বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আশা ফিকে হতে শুরু করে।

বছরের শুরুতে বিটকয়েনের দাম ছিল ৯৩,৫৪০ ডলার। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির অনিশ্চয়তার কারণে এপ্রিলে তা ৭৪,৫০০ ডলারে নেমে আসে। পরে শুল্ক উদ্বেগ কমলে এবং ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দিলে এর দাম আবারও বাড়ে। অক্টোবরে বিটকয়েনের দাম রেকর্ড ১,২৬,২০০ ডলারে পৌঁছায়, যা ছিল বছরের শুরুতে থাকা দামের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি।

তবে এই উত্থান বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সুদের হার কমার আশা ক্ষীণ হয়ে আসায় এবং বৈশ্বিক বাজারে ঝুঁকি এড়ানোর প্রবণতা বাড়ায় বিটকয়েনের দামে তীব্র পতন ঘটে। বুধবার এর দাম প্রায় ৮৯,০০০ ডলারে নেমে আসে, যা এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন। এর ফলে বিটকয়েন তার চলতি বছরের সমস্ত মুনাফা হারিয়ে ফেলে। গত এক মাসে বিটকয়েন ১৫.১৪ শতাংশ এবং গত এক বছরে ৬.৩ শতাংশ দর হারিয়েছে। বৃহস্পতিবার গ্রিনিচ মান সময় ০৭৪৫-এ এটি ৯২,০২০ ডলারে লেনদেন হচ্ছিল, যা বছরের শুরুর তুলনায় প্রায় ২.২ শতাংশ কম। বাজার মূলধনের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইথেরিয়ামের দামও একইভাবে কমেছে।

ব্লকচেইন বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান গ্লাসনোডের একটি সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিটকয়েন এখন ‘স্থিতিশীলতার একটি পর্যায়ে’ প্রবেশ করছে এবং বাজারে অতিরিক্ত বিক্রির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাদের মতে, ‘বাজার সম্ভবত ৯৪ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের মধ্যে একটি স্বল্পমেয়াদী নিম্নসীমা তৈরি করতে পারে।’

অস্থিরতা নতুন নয়

সাম্প্রতিক দরপতন বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করলেও অধ্যাপক হার্ভে বলছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি আগেও দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘অতীতে বিটকয়েনের ৬০ শতাংশের বেশি দরপতনের ছয়টি ঘটনা ঘটেছে—সুতরাং কোমর বেঁধে প্রস্তুত থাকুন। তবে একটি বিষয়ে মিল হলো, প্রতিবারই বিটকয়েন ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এর মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থেকেছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ডিজিটাল মুদ্রার জগতে এখন মার্কিন ডলারের মতো সম্পদ দ্বারা সমর্থিত ‘স্টেবলকয়েন’ নিয়ে আলোচনা বাড়ছে, যাকে তিনি ক্রিপ্টোর ‘প্রথম যুগান্তকারী উদ্ভাবন’ বলে মনে করেন। একই সঙ্গে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিটকয়েনে বিনিয়োগের কৌশল নিয়েও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বলে তিনি জানান।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.