মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার

একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকার সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সম্মান জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এখন থেকে আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে এই দেশের জনগণই যেন সব ক্ষমতার উৎস হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশ মানবিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পায়।’ তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধকে অভিহিত করে বলেন, এই অর্জনের মাধ্যমেই বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি জানান, এই দিনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনতা সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করেছিল। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বাংলাদেশের বিজয়কে ত্বরান্বিত করে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ।

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক জনযুদ্ধের রূপ নেওয়ার বিষয়টিও তিনি স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রসহ সর্বস্তরের মানুষ যার যা কিছু ছিল, তাই নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে সব বাহিনীকে ‘বাংলাদেশ ফোর্সেস’-এর অধীনে এনে সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে নৌকমান্ডোদের পরিচালিত ‘অপারেশন জ্যাকপট’ এবং বিমানবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘কিলোফ্লাইট’-এর দুঃসাহসী অভিযানের কথাও স্মরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এসব অভিযান চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সঙ্গে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগের কথাও স্মরণ করেন। সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম চালু থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাদের প্রতি আনুষ্ঠানিক সম্মান প্রদর্শনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।