জলবায়ু সম্মেলনে শেষ মুহূর্তে চুক্তি, তবে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ৩০-এ শেষ মুহূর্তে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছেছেন প্রতিনিধিরা, তবে এটি বহু প্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা ও পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর উচ্চাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের মূল চালক জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধের কোনো রূপরেখা এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ৮০টিরও বেশি দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধে একটি বৈশ্বিক রূপরেখার আহ্বান জানালেও চূড়ান্ত নথিতে এমন কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। সম্মেলনটি ‘আমাজনের প্রবেশদ্বার’ হিসেবে পরিচিত স্থানে অনুষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও, পৃথিবীর ‘ফুসফুস’ খ্যাত আমাজন রেইনফরেস্ট রক্ষা এবং বন উজাড় বন্ধে কোনো বড় ধরনের নতুন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে এই চুক্তি।

সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটির এনার্জি জাস্টিস ডিরেক্টর জ্যাঁ সু এই চুক্তিকে ‘বিপর্যয়কর ব্যর্থতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সম্মেলনস্থলে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসিকে বলেন, ‘অর্থায়নসহ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধে ন্যায্য ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে কপ৩০-এর বিপর্যয়কর ব্যর্থতার জন্য সম্মেলনস্থলে আগুন লাগার চেয়ে উপযুক্ত রূপক আর হতে পারে না।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে লাভবান ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিতে এবং নিজেরা আগে পদক্ষেপ নিতে কোনো অর্থবহ প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই আলোচনা বারবার বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।’

বন উজাড় ও জীবাশ্ম জ্বালানি বিষয়ে রূপরেখা না থাকায় কিছু প্রতিনিধি এবং পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর হতাশা স্বীকার করে কপ৩০-এর সভাপতি আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগো সম্মেলনের শেষের দিকে জানান, তিনি তার পদের ক্ষমতাবলে এই রূপরেখাগুলো নিজেই তৈরি করবেন। তবে, এই রূপরেখাগুলো বাধ্যতামূলক হবে না, কারণ এগুলো অনুমোদিত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং এতে ১৯৫টি দেশের সবার সমর্থন নেই।

অন্যদিকে, কপ৩০-এ অংশ নেওয়া পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহের এই সম্মেলনে কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত এটি অনেক প্রতিনিধি ও পরিবেশকর্মীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট অনি দাশগুপ্ত এবিসিকে বলেন, ‘অভিযোজন অর্থায়ন তিনগুণ করা, বিশ্বের বন রক্ষা এবং আদিবাসীদের কণ্ঠকে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার মতো যুগান্তকারী সাফল্য কপ৩০-এ এসেছে। এটি দেখায় যে একটি প্রতিকূল ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও আন্তর্জাতিক জলবায়ু সহযোগিতা ফল দিতে পারে।’