নরসিংদীর মাটি কেন ফেটেছে? যা বলছে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর

নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট মাটির ফাটলের কারণ হিসেবে ‘ভূমি তরলীকরণ’ প্রক্রিয়াকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটি কোনো বড় ধরনের ফাটলরেখা বা ফল্টলাইনের কারণে ঘটেনি, তাই এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে, যার কেন্দ্রস্থল ছিল নরসিংদী। এর পরদিন শনিবার সকালেও আরেকটি কম্পন অনুভূত হয়। শুক্রবারের ভূমিকম্পে শিশুসহ মোট ১০ জন নিহত ও ৬ শতাধিক মানুষ আহত হন বলে জানা যায়, যার মধ্যে পাঁচজনেরই মৃত্যু হয় নরসিংদীতে।

ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য জিএসবির তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল নরসিংদীর উপদ্রুত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে। উপপরিচালক মো. মাহমুদ হোসেন খান, আনিসুর রহমান ও সেলিম রেজার সমন্বয়ে গঠিত এই দল পলাশ উপজেলা ও ঘোড়াশালের লেবুপাড়াসহ অন্তত তিনটি স্থানের ফাটল পরীক্ষা করে। তারা দেখতে পান, ৪ থেকে ৩০ মিটার দীর্ঘ এই ফাটলগুলোর সবই জলাশয়ের সমান্তরালে তৈরি হয়েছে এবং সেখানকার মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি।

জিএসবির উপপরিচালক মো. মাহমুদ হোসেন খান জানান, ভূমিকম্পের তরঙ্গ যখন জলাশয়ের নিকটবর্তী আলগা বালুমাটিতে আঘাত করে, তখন পাশের জলাশয়ের পানি তীব্র বেগে বালুর স্তরে প্রবেশ করে। এর ফলে মাটি তার ভার বহনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং সাময়িকভাবে তরলের মতো আচরণ করে। এই তরলীকৃত মাটির ওপরের পৃষ্ঠ ফেটে যায়, যা নরসিংদীতে ঘটেছে।

শনিবারের কম্পনটি ‘পরাঘাত’ বা আফটারশক কি না, তা নিশ্চিত হতে প্রায় ২৯০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন জিএসবির বিশেষজ্ঞ আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, যদি আগামী ২৯০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রস্থলের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে এর চেয়ে কম মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তবে সেগুলোকে আফটারশক হিসেবে গণ্য করা হবে।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান মনে করেন, শুক্রবারের কম্পনটিই ছিল ‘মূল কম্পন’ এবং নরসিংদীতে আপাতত বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা কম। জিএসবির আরেক উপপরিচালক সেলিম রেজা ছোট ছোট কম্পনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, কারণ এর মাধ্যমে ভূগর্ভে সঞ্চিত শক্তি ধীরে ধীরে নির্গত হয়ে বড় ঝুঁকি কমাতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে জানিয়েছেন, নরসিংদীতে সৃষ্ট ফাটলগুলো অগভীর এবং মাটি ভরাট করে সহজেই সারা করা সম্ভব। তবে ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখার ওপরও তারা জোর দিয়েছেন।