‘আমাকেই পেটান, আমি পিটুনি খাব’, বাউলদের পাশে ফরহাদ মজহার

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পীদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রতিবাদে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আগামী দিনগুলোতে বাউল-ফকিরদের নিয়ে মানিকগঞ্জেই মহাসম্মেলন করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বাউলদের ওপর যারা হাত তুলেছে, আমি নিজে সেখানে থাকব। আমাকে পেটালে পিটুনি খাব। কিন্তু আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে এ ধরনের বর্বরতা আর সহ্য করা হবে না।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাধুগুরুভক্ত ও ওলি-আওলিয়া আশেকান পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে ফরহাদ মজহার এসব কথা বলেন। সমাবেশে বাউলশিল্পী আবুল সরকার ও তার অনুসারীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ এবং শিল্পীর মুক্তির দাবি উঠে আসে।

ফরহাদ মজহার বলেন, যে সহিংসতাকে আপনারা ইসলামের নামে চালাতে চাইছেন, এর সঙ্গে প্রকৃত ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সহিংসতা ইসলামের পথ নয়। নিরীহ মানুষের ওপর হামলা করে কেউ রসুলের উম্মত দাবি করতে পারে না।

তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে একটি ‘ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট ধারা’ ঐতিহ্যবাহী বাউল-সুফি সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।

আজ আমাদের বাউলধারা, ফকির, আশেক, ওলি-আওলিয়াদের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ চলছে, এর মূল টার্গেট মানুষ ও মানবতার শিক্ষা। তাই সবার প্রতি আহ্বান লড়াইটা আমাদের সঙ্গে চালিয়ে যান, বলেন তিনি।

বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে ফরহাদ মজহার বলেন, ভোটের রাজনীতির জন্য অন্যায়ের পাশে দাঁড়ালে জনগণ তা ক্ষমা করবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই। আজ বাউলদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে যদি না দাঁড়ান, জনগণও আপনাদের ক্ষমা করবে না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে। যারা এসব করছেন, তারা সাবধান হয়ে যান, চক্রান্ত চিরদিন গোপন থাকে না।

সমাবেশে আবুল সরকারের স্ত্রী আলেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন, ধর্ম অবমাননার অপবাদ দিয়ে আমার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর আবার আমাদের ছেলেদের ওপর হামলা করা হয়েছে। যারা হামলা করেছে, তারাই পরে থানায় গিয়ে বাউলদের বিরুদ্ধে মামলা দিল!

তিনি বলেন, থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণে গড়িমসি করে। ওসি সাহেব হামলাকারীদের সঙ্গে বের হয়ে গেলেন। আমাকে বললেন- ‘অভিযোগ দিয়ে যান।’ কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।

গত বৃহস্পতিবার ঘিওর উপজেলার এক ইমামের দায়ের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় বাউল শিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পরদিন রবিবার শিল্পীর অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নামলে ‘তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে কয়েকজন হামলা চালায়, আহত হন অন্তত চারজন।

এই ঘটনার জেরে বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, বছরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙা, সুফি কার্যক্রম ব্যাহত করা এবং বাউলদের ওপর হামলার মতো ঘটনা বাড়লেও অন্তর্বর্তী সরকার কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণমাধ্যমকর্মী আরিফ রহমান, বাউলভক্ত শাহীন সরকার, সুফিবাদ সর্বজনীন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী মুনতাসির রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খানসহ অনেকে।

বক্তারা জানান, বাউল-সুফি ঐতিহ্য বাংলাদেশের সংস্কৃতির মূলধারা। এই ঐতিহ্যের ওপর আক্রমণ মানে মানবতার ওপর আক্রমণ।

বক্তারা আরও জানান, মানিকগঞ্জে ঘোষণা করা বাউল সম্মেলন হবে ‘বৃহত্তর ঐতিহ্য রক্ষার প্রতীকী সমাবেশ’। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাউল, ফকির ও সুফিপন্থীরা যোগ দেবেন।