পুলিশ প্রশাসনে পরিবর্তনের ঢেউ: ওসিও লটারিতে নির্ধারিত হবে

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের পুলিশ প্রশাসনে একটি বড় ধরনের রদবদল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে লটারির মাধ্যমে ৬৪ জেলার জন্য নতুন পুলিশ সুপার (এসপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং এবারই প্রথম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদেও লটারির মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।

সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই লটারি অনুষ্ঠিত হয়। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, লটারিতে চূড়ান্ত হওয়া এসপিদের তালিকা শিগগিরই প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দু-এক দিনের মধ্যেই এই প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

চূড়ান্ত হওয়া এসপিদের তালিকায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কর্মকর্তা নতুন মুখ। বাকিরা বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় এসপি হিসেবে কর্মরত থাকলেও লটারির মাধ্যমে তাদের কর্মস্থল পরিবর্তন করা হয়েছে। মূলত বিসিএস ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এবারের এসপিদের নির্বাচন করা হয়েছে। লটারির সময় ভারপ্রাপ্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এসপিদের পাশাপাশি সারাদেশে ৬৬৬টি থানার ওসি পদায়নের ক্ষেত্রেও লটারি পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। পুলিশ সদরদপ্তর ইতোমধ্যে ‘সৎ’ ও ‘নিরপেক্ষ’ পুলিশ পরিদর্শকদের একটি তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে, যা বিভিন্ন ইউনিট প্রধানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি এবং মহানগর কমিশনাররা লটারির মাধ্যমে তাদের অধীনস্থ থানাগুলোর জন্য ওসি চূড়ান্ত করবেন।

এই রদবদলের জন্য ৬৪টি জেলাকে তাদের গুরুত্ব অনুযায়ী ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’— এই তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, যশোর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও দিনাজপুর জেলাকে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এসপি পদে মনোনয়নের জন্য প্রথমে বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি পুল গঠন করা হয়। এরপর সেই পুল থেকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন দায়িত্বের জন্য এসপি বাছাই করা হয়।

লটারির মাধ্যমে কর্মকর্তা বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়া নিয়ে পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একাংশ মনে করছে, এর ফলে ব্যক্তিগত পছন্দ বা তদবিরের সুযোগ কমবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে। তবে অন্য একটি অংশের আশঙ্কা, এই পদ্ধতির কারণে তুলনামূলক কম অভিজ্ঞ কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ জেলায় পদায়ন পেতে পারেন, যা আইনশৃঙ্খলার ব্যবস্থাপনায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়টি সার্বিকভাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন একই স্থানে কর্মরত থাকলে অনেক সময় কর্মকর্তাদের নিজস্ব বলয় তৈরি হয়। বদলির ফলে তা ভেঙে যায়। আবার নতুন কর্মস্থলে গিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও কিছুটা সময় লাগে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও পদায়ন ও বদলির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের সততা এবং নিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।