আপনি পড়ছেন

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক নতুন মূল্যায়ন অনুযায়ী, পাকিস্তানের গভীর অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ দেশটির প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অভিজাতদের নিয়ন্ত্রিত দুর্নীতি। সংস্থাটি বলছে, রাষ্ট্রের নীতিগুলো এমনভাবে তৈরি ও পরিচালিত হয়, যা কেবল এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে। ‘স্টেট ক্যাপচার’ নামের এই প্রক্রিয়ার কারণে দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

পাকিস্তানের পতাকা

পাকিস্তানের অনুরোধে প্রস্তুত করা ‘দ্য গভর্ন্যান্স অ্যান্ড করাপশন ডায়াগনস্টিক অ্যাসেসমেন্ট (জিসিডিএ)’ শীর্ষক ১৮৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, এই ‘এলিট সুবিধা কাঠামো’ ভেঙে ফেলা না গেলে দেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটানো সম্ভব নয়। নভেম্বরে চূড়ান্ত হওয়া এই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দুর্নীতি দেশটির বাজার ব্যবস্থাকে বিকৃত করার পাশাপাশি জনগণের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।

প্রতিবেদনটিতে দুর্নীতির আর্থিক ক্ষতির একটি চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। দেখা গেছে, শুধু ২০২৩ অর্থবছরে আবাসন, উৎপাদন এবং জ্বালানি খাতে প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে দেওয়া কর ছাড় ও অন্যান্য সুবিধার কারণে পাকিস্তানের জিডিপির ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। আইএমএফের হিসাবে, এই ‘এলিট সুবিধা’, যার মধ্যে ভর্তুকি, কর মওকুফ এবং লাভজনক সরকারি চুক্তি অন্তর্ভুক্ত, প্রতি বছর অর্থনীতি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার শুষে নিচ্ছে।

এই সমস্যা অবশ্য নতুন নয়। ২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) একটি প্রতিবেদনেও একই ধরনের তথ্য উঠে এসেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের প্রভাবশালী গোষ্ঠী, যার মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক এলিটরা অন্তর্ভুক্ত, তাদের দেওয়া বিশেষ সুবিধার কারণে দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ ক্ষতি হয়। লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক আলী হাসনাইনও মনে করেন, আইএমএফের পর্যবেক্ষণ সঠিক হলেও এটি কোনো নতুন তথ্য নয়।

আইএমএফ বলছে, সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে পাকিস্তানের অর্থনীতি বড় ধরনের সুফল পেতে পারে। সংস্থাটির মতে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সুশাসন সংক্রান্ত সংস্কার বাস্তবায়ন করা হলে দেশটির জিডিপি ৫ থেকে ৬.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। বর্তমানে পাকিস্তানের জিডিপির আকার ৩৪০ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনে স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল (এসআইএফসি)-এর মতো শক্তিশালী সংস্থার স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে গঠিত এই বেসামরিক-সামরিক সংস্থাটিকে বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হলেও এর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। আইএমএফ সুপারিশ করেছে, এসআইএফসিকে অবশ্যই প্রতি বছর তার কার্যক্রমের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।

পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থা এবং দুর্নীতি দমনকারী সংস্থাগুলোর দুর্বলতাকেও এই সংকটের জন্য দায়ী করা হয়েছে। দেশটির আদালতগুলোতে ২০ লাখের বেশি মামলা ঝুলে আছে। অন্যদিকে, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) এবং ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এফআইএ) মতো সংস্থাগুলো প্রায়ই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টেফান ডারকনের মতে, দুর্নীতির মামলায় জবাবদিহি না থাকা দেশটির সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইসলামাবাদের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সাজিদ আমিন জাভেদ বলেন, ‘নীতি তৈরির জায়গায় এলিটদের দখলই সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই ধাঁধা থেকে বের হতে হলে আরও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি দরকার।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.