পুতিন: ইউক্রেন পিছু হটলে যুদ্ধ বন্ধ করবে রাশিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য একটি নতুন শর্ত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মস্কোর দাবি করা অঞ্চলগুলো থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সরে যেতে হবে, অন্যথায় রাশিয়া সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নিজের লক্ষ্য অর্জন করবে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) কিরগিজস্তান সফরকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

পুতিনের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনী ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে, সংখ্যা ও অস্ত্রের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ইউক্রেনীয় বাহিনী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনীয় বাহিনী যদি তাদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলো ছেড়ে যায়, তবে আমরা যুদ্ধ বন্ধ করব। যদি না যায়, তাহলে সামরিকভাবে তা আমরা অর্জন করে নেব।’

বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখলে রেখেছে, যা কিয়েভ কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজি নয়। এই বিষয়টি শান্তি আলোচনার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এদিকে, প্রায় চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন শান্তি উদ্যোগ নিয়েছে। মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে আসন্ন আলোচনায় এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক প্রস্তাবে কিয়েভকে পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল, যা ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা না করায় কিয়েভ ও ইউরোপে ক্ষোভের জন্ম দেয়। সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পনাটি সংশোধন করেছে, তবে নতুন সংস্করণটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। পুতিন জানিয়েছেন, সংশোধিত এই খসড়া ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি হতে পারে।

আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রধান আলোচক স্টিভ উইটকফ মস্কো সফর করবেন এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকলও এই সপ্তাহে কিয়েভে যাবেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি পুতিন দাবি করেন, দোনেৎস্কের পোকরোভস্ক ও মিরনোগ্রাদ শহরে ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ সেনাদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া তিনি রুশ বাহিনীর ভোভচানস্ক, সিভেরস্ক এবং গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র গুলিয়াইপোলের দিকে অগ্রসরের কথাও জানান। তার মতে, ‘রুশ অভিযান ব্যাহত করা প্রায় অসম্ভব।’

পুতিন আরও বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শাসন ক্ষমতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় তার সঙ্গে কোনো চুক্তি সম্পাদন করা আইনগতভাবে প্রায় অসম্ভব। তবে কিয়েভ পুতিনের এসব দাবি নাকচ করে দিয়েছে।

আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রুশ বাহিনী প্রতি মাসে গড়ে ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করছে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের মধ্য দিয়ে এই সংঘাত শুরু হয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত লাখো মানুষ নিহত এবং কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।