বিচার চেয়ে থানায় স্বজনদের নজিরবিহীন অবস্থান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার চত্বরে এক অভূতপূর্ব ও শোকাবহ দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাত্রদলের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেনের লাশ নিয়ে তার স্বজন ও এলাকাবাসী সেখানে অবস্থান শুরু করেন। হত্যার ঘটনায় দ্রুত মামলা নথিভুক্ত করার দাবিতে তাদের এই অস্থান পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

নিহত সাদ্দামের বাবা মোস্তফা কামাল ওরফে মস্তু মিয়া এই ঘটনায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেনসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্বজনেরা লাশ নিয়ে থানা চত্বরেই অবস্থান নেন। মোস্তফা কামাল জানান, ‘মামলার কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা থানা চত্বর ছাড়ব না।’

এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাত দেড়টার দিকে সাদ্দাম হোসেন যখন বাসায় খাবার খাচ্ছিলেন, তখন দেলোয়ার হোসেন ও তার সহযোগীরা তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই, রাত দুইটা নাগাদ, পরিবারের সদস্যরা সাদ্দামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পান।

খবর পেয়ে তারা কান্দিপাড়ার শংকর শাহবাড়ির পাশের একটি নতুন সেতুর ওপর সাদ্দামকে গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পান। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সাদ্দাম সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য ছিলেন এবং তার স্ত্রী ও দুটি মেয়ে রয়েছে।

শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে সাদ্দামের লাশ হস্তান্তর করা হয়। এরপরই স্বজনেরা লাশ নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এবং মিছিলটি সদর থানায় গিয়ে শেষ হয়। রাত সোয়া আটটার দিকে তারা লিখিত এজাহার জমা দেন। পুলিশের আশ্বাসে একবার থানা চত্বর ত্যাগ করলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই মামলা রেকর্ডের নিশ্চয়তা চেয়ে তারা আবার লাশ নিয়ে ফিরে আসেন।

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম জানান, অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং পুলিশের একাধিক দল বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘গুলির ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্র উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল এবং কোনো আসামি আটক হয়নি।