ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে জেনেভায় হাজারো মানুষের পদযাত্রা

ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হাজারো মানুষ শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন সংহতি দিবস উপলক্ষে শনিবার অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জবাবদিহির দাবি জানান।

বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট, অ্যান্ড স্যাংশনস (বিডিএস) আন্দোলনের আয়োজনে ‘বিগ জেনেভা প্রোটেস্ট’ নামের এই পদযাত্রাটি জেনেভা হ্রদের নিকটবর্তী ইংলিশ গার্ডেন থেকে শুরু হয়ে জাতিসংঘের জেনেভা কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

পুলিশি উপস্থিতিতে বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা নেড়ে এবং ইসরায়েল-বিরোধী ব্যানার হাতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’, ‘নদী থেকে সাগর পর্যন্ত ফিলিস্তিন মুক্ত হবে’, ‘ইসরায়েলকে আদালতে আনো’, ‘যুদ্ধাপরাধ বন্ধ করো’ এবং ‘ইসরায়েলকে বয়কট করো’।

তারা ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ন্যায়বিচার ও উপনিবেশমুক্তকরণ’ ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারের কথা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেন এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে তারা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জোর দাবি জানান।

বিক্ষোভকারীরা গাজার পরিস্থিতি নিয়ে নীরব ভূমিকার জন্য সুইজারল্যান্ডকে অভিযুক্ত করেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করার জন্য বার্নের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের নীরবতাই এই অপরাধের প্রতি সম্মতি।’

ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ এখনো ‘অনিশ্চিত’

অ্যান-মারি কস্তা নামে একজন সুইস-স্প্যানিশ বিক্ষোভকারী আনাদোলুকে জানান, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ‘গণহত্যা’ চলছে এবং সরকারগুলোর নিষ্ক্রিয়তার দিকে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কস্তা বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি কারণ গাজার পরিস্থিতি স্পষ্টতই বিপর্যয়কর। শুধু যে গণহত্যা চলছে তাই নয়, সরকারগুলোও কিছুই করছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা এমন ভয়ঙ্কর সব ছবি দেখছি, যা আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। তাই এটা স্বাভাবিক যে আমরা এখানে এসেছি মানবতা ও বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর সংঘটিত অপরাধের নিন্দা জানাতে।’

বিক্ষোভের অন্যতম আয়োজক সংগঠন বিডিএস জেনেভা মুভমেন্টের সদস্য ও সুইস বিক্ষোভকারী আনাইস আন্ত্রেসিয়ান আনাদোলুকে জানান, আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস উপলক্ষে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। আন্ত্রেসিয়ান বলেন, ‘আমরা এখনো এমন এক পরিস্থিতিতে আছি যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণ কীভাবে নিজেদের শাসন করবে বা কোন অঞ্চলে থাকবে, সে বিষয়ে তাদের কোনো মতামত নেই। তাদের এই অধিকারগুলোকে এখনো সম্মান করা হচ্ছে না।’

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তিনি জানান, বর্তমান যুদ্ধবিরতি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিন সংকটের মূল কারণগুলো সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। তার মতে, মূল সমস্যা হলো যুদ্ধবিরতি এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনা এখনো ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে সম্মান করে না এবং দখলদারিত্ব ও বর্ণবাদের বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা তাদের পুনর্গঠনের সমস্ত অধিকার না পাবে, ততদিন আমাদের এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’