কিশোরগঞ্জ: ফাঁকা ২ আসন নিয়ে বিএনপির ১৬ নেতার দৌড়ঝাঁপ, জামায়াতের প্রার্থী সাবেক রাষ্ট্রপতির শ্যালক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের ছয়টি সংসদীয় আসনে রাজনৈতিক তৎপরতা ক্রমশ বাড়ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) এবং কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসন দুটি এখনো ফাঁকা রেখেছে। এই দুই আসনে দলটির অন্তত ১৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।

বিএনপির প্রার্থীহীন আসন দুটির মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনটি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কোনো শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা চলছে। এই আসনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম এবং ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার নাম আলোচনায় রয়েছে। অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এবং সাবেক সহসভাপতি রেজাউল করিম খানসহ আটজন নেতা মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

এর বিপরীতে, প্রায় নয় মাস আগেই জেলার ছয়টি আসনেই নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারণায় বেশ এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। তাদের প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের প্রার্থী কর্নেল (অব.) জেহাদ খান, যিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক। তিনি জানিয়েছেন, মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। অন্যান্য আসনেও জামায়াতের প্রার্থীরা সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন।

যে চারটি আসনে বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে, সেখানেও রয়েছে অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে আইনজীবী মো. ফজলুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও তার বিরোধিতা করছেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী। একই রকম পরিস্থিতি কিশোরগঞ্জ-৩ আসনেও, যেখানে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এম ওসমান ফারুককে মনোনয়ন দেওয়া হলেও জেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে জালাল উদ্দীন এবং কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে মো. শরীফুল আলমকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

এদিকে, জেলার রাজনৈতিক মাঠে অন্যান্য দলও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া গণ অধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারাও প্রচার চালাচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের বিগত সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হকও (চুন্নু) নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সার্বিক পরিস্থিতিতে জেলার নির্বাচনী পরিবেশ বেশ জমে উঠেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলম আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসনেই তাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত করা এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রথম আলো অবলম্বনে