জাইকার দুই প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে সরকারের আপত্তি
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) প্রস্তাবিত দুটি প্রকল্প দেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এবং এগুলোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। আগের প্রকল্পের বিপুল অর্থ অব্যবহৃত থাকা এবং নতুন ঋণের সুদহার বেশি হওয়ায় এই আপত্তি তোলা হয়েছে। সংস্থাগুলোর মতে, যথাযথ চাহিদা যাচাই ছাড়া প্রস্তাবগুলো ‘চাহিদানির্ভর’ না হয়ে ‘সরবরাহনির্ভর’ বলে মনে হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত দুটি প্রকল্পের জন্য জাইকা পরামর্শক সেবাসহ ২.৩৫ শতাংশ সুদ চেয়েছে, যা গত জুনে দেওয়া ২ শতাংশের চেয়ে বেশি। এটি অনুমোদিত হলে জাইকার ঋণ বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) চেয়ে ব্যয়বহুল হবে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি জাইকার একটি প্রতিনিধিদল তিনটি নতুন প্রকল্পের ঋণ প্রস্তুত করতে বাংলাদেশ সফর করে। এরপর গত ১৬ অক্টোবর ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এবং আমেরিকা ও জাপান উইংয়ের প্রধান মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ইআরডি এবং বিদ্যুৎ বিভাগ ‘ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন প্রজেক্ট (এফডিআইপিপি) দ্বিতীয় পর্যায়’ এবং ‘পাওয়ার গ্রিড স্থিতিশীলকরণ প্রকল্প’ নিয়ে আপত্তি জানায়।
এফডিআইপিপি দ্বিতীয় পর্যায়
ইআরডি সূত্র জানায়, এফডিআইপিপি প্রথম পর্যায়ের প্রায় ২৪০ কোটি টাকা অব্যবহৃত থাকলেও জাইকা এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৬০,০৫৩ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ৪,৭০৩ কোটি টাকা) ঋণের প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইআরডির কর্মকর্তারা অব্যবহৃত অর্থ প্রথমে কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) সম্প্রসারণ, বিডার কেন্দ্রীয় বিনিয়োগ লাইসেন্সিং প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাবিজ’ শক্তিশালীকরণ এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগনির্ভর শিল্পে দ্বি-স্তরীয় ঋণ (টিএসএল) প্রদান।
প্রথম পর্যায়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৪৮০ একর জমির বহিঃস্থ উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে আটটি প্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও মাত্র একটি টিএসএল সুবিধা ব্যবহার করেছে। একটি শুল্ক ভবন নির্মাণ করা হলেও সেটির সরঞ্জাম কেনার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের তহবিলের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। ইআরডির কর্মকর্তারা ঋণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রথম পর্যায়ের অব্যবহৃত অর্থ দিয়ে ওই সরঞ্জাম কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া, বিডার ‘বাংলাবিজ’ প্ল্যাটফর্মটি যেহেতু ২০২৫ সাল থেকে পুরোপুরি চালু রয়েছে, তাই এর জন্য নতুন করে ঋণ নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বেজা প্রথমে প্রথম পর্যায়ের একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করবে, যার ভিত্তিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, তাদের মূল মনোযোগ এখন প্রথম পর্যায়ের কাজে এবং এর অগ্রগতি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
পাওয়ার গ্রিড প্রকল্প
সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধিরা জানান, ‘পাওয়ার গ্রিড স্থিতিশীলকরণ প্রকল্প’ নিয়ে তারা সতর্ক। তাদের মতে, যথেষ্ট আলোচনা বা মাঠপর্যায়ে বিস্তারিত সমীক্ষা ছাড়াই প্রস্তাবটি এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে ঋণ গ্রহণের আগে আরও অভ্যন্তরীণ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো, কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কিছু সরঞ্জাম প্রতিস্থাপনসহ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক ও উপকেন্দ্রের উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ও চাহিদা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করা। বিভাগটি প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে জাইকার প্রস্তাবের বিষয়ে ইআরডিকে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
এ বিষয়ে জাইকার ঢাকা কার্যালয় জানিয়েছে, প্রকল্পগুলো বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনাধীন থাকায় তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। সুদের হার নিয়ে তারা জানায়, জাপানি অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (ওডিএ) ঋণের শর্তাবলি তাদের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত দেশের শর্তই প্রযোজ্য।
সভায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) নামে জাইকার আরেকটি প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়। মাতারবাড়ী বন্দরে পণ্য পরিবহন সহজ করতে জাতীয় মহাসড়ক-১ প্রশস্ত করাই এর লক্ষ্য। ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরে ঋণের পরিমাণ চূড়ান্ত হতে পারে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.