‘ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জনবল সংকটে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জনবল সংকটের মুখোমুখি’ বলে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন দেশটির একজন রিজার্ভ জেনারেল ও সামরিক বিশ্লেষক। জেনারেল ইৎজাক ব্রিক নামে ওই বিশ্লেষক মনে করেন, এই পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর যুদ্ধ করার ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করতে পারে। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভে প্রকাশিত এক মতামত কলামে ইৎজাক ব্রিক লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার কর্মকর্তা ও নন-কমিশন্ড কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর ডাকে সাড়া দেননি বা চুক্তি নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনেক কর্মকর্তা দ্রুত অবসরের আবেদন করছেন এবং নতুন প্রজন্ম দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে সই করতে চাইছে না। এর ফলে বাহিনীর বিভিন্ন শাখায় জনবল ঘাটতি চরমে পৌঁছেছে, যা সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ ও যুদ্ধব্যবস্থার কার্যকারিতায় বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এই সংকটের জন্য বহু বছরের ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘পুরুষদের জন্য তিন বছর এবং নারীদের জন্য দুই বছরের বাধ্যতামূলক সেনাসেবার মেয়াদ কমানো, অদক্ষ জনবল ব্যবস্থাপনা এবং অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তগুলোই আজকের এই বিশাল ঘাটতির জন্য দায়ী।’ এর ফলে বর্তমানে অপ্রস্তুত সেনারা এমন সব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, যা যুদ্ধক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তারা উপযুক্ত নন।

জেনারেল ব্রিক আরও অভিযোগ করেন, ‘সেনাবাহিনীর মানবসম্পদ বিভাগ বহু বছর ধরে অপেশাদারিত্ব ও দায়িত্বহীনতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।’ তার মতে, এই বিভাগ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও চাহিদার মূল সমস্যাগুলো উপেক্ষা করেছে। পুরোনো তথ্যভান্ডার ও দুর্বল তথ্য-ব্যবস্থাপনার কারণে বাহিনী তথ্যগত দিক থেকে প্রায় অন্ধ হয়ে পড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এই জনবল সংকট দ্রুত সমাধান করা না হলে তা সেনাবাহিনীর জন্য ‘সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত’ ডেকে আনতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গাজায় চলমান সংঘাতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত ৯২৩ জন সেনাসদস্যকে হারিয়েছে এবং আহত হয়েছেন ছয় হাজার ৩৯৯ জন। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের তথ্যমতে, প্রায় ২০ হাজার সেনা যুদ্ধ পরবর্তী মানসিক আঘাতে ভুগছেন। তবে সেনাবাহিনীর মনোবল ধরে রাখতে কঠোর সেন্সরশিপের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য গোপন করার অভিযোগও রয়েছে।