প্রাথমিকে অচলাবস্থা: হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। মন্ত্রণালয়ের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিন দফা দাবি মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ফলে বৃহস্পতিবারও দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলবে এবং বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

বুধবার রাতে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর নেতাদের যৌথ ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে উন্নীত করাসহ অন্যান্য দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান জানান, শিক্ষকরা বুধবার সর্বাত্মকভাবে শাটডাউন পালন করেছেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না বা পরীক্ষা নেবেন না।

শিক্ষকদের এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিকেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে বলা হয়, অবিলম্বে শিক্ষকদের কাজে যোগ দিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। যদি কেউ পরীক্ষা না নিয়ে কর্মবিরতি বা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা এবং ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ শিবলী সাদিক স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও অভিযোগ করা হয়, কিছু শিক্ষক পরীক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক সহকর্মীদের বাধা দিচ্ছেন এবং শারীরিক লাঞ্ছনার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন, যা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য।

তবে মন্ত্রণালয়ের এই অবস্থানকে তোয়াক্কা করছেন না আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, গত ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর ২২ দিন অতিবাহিত হলেও দাবির বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। শিক্ষক নেতারা বলছেন, ২০২৩ ও ২০২৫ ব্যাচের নবীন শিক্ষকসহ আন্দোলনকারীদের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শোকজ নোটিশ পাঠানো হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক।

শিক্ষকদের মূল তিনটি দাবি হলো— সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি করা, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা।

অন্যদিকে মন্ত্রণালয় দাবি করছে, শিক্ষকদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নে তারা আন্তরিক। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার বিষয়টি বিবেচনার জন্য পে-কমিশনের সভাপতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উচ্চতর গ্রেড এবং পদোন্নতির বিষয়ে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েও পত্র পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবিগুলো নিয়ে ব্যক্তিগতভাবেও আলোচনা করেছেন। তবুও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন জিম্মি করে এমন কর্মসূচি পালন অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছে মন্ত্রণালয়।